রাজধানীজুড়ে আবর্জনা উদ্বিগ্ন নগরবাসী

রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন পাঁচ হাজার টনের বেশি বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় রাস্তা-ঘাটে ময়লা-আবর্জনা।

কলার খোসা, কাগজ, প্লাস্টিকের ব্যাগ অথবা বোতল দেখা যাবে না ঢাকায় এমন রাস্তা বা মহল্লা খুব কমই আছে। খোলা কনটেইনারের উপচেপড়া আবর্জনার পাশ দিয়ে নাকে হাত দিয়ে চলতে দেখা যায় পথচারীদের। 

প্রতিদিন ঝাড়ু দেয়ার কথা থাকলেও পরিষ্কার করা হয় না রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক। নিয়মিত সরানো হয় না সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানের ময়লাও। তাই রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমছে ময়লার স্তূপ। আবার ঢাকার বিভিন্ন ঝিল বা খালও পরিণত হয়েছে নর্দমায়।

রাজধানীর জুরাইন-গেন্ডারিয়া সড়ক, দয়াগঞ্জ-জুরাইন ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, লালবাগ, কাঁঠালবাগান, বনশ্রী, ধানমন্ডিসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গত এক সপ্তাহে দেখা গেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই বেহাল। উত্তর সিটি কিছুটা পরিচ্ছন্ন হলেও মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় নিয়মিত বর্জ্য পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের। 

সিটি করপোরেশনের মাঠকর্মীরা বলছেন, জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে এই দশা। আর পরিবেশবিদরা বলছেন, সংকট সমাধানে তৎপরতা নেই নগর প্রশাসনের। 

নগরবাসীরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার জন্য ঢাকা আবর্জনার শহরে পরিণত হয়েছে। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার দাবি, নগরবাসীর অসচেতনতার কারণেই যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। নগরবাসীর যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলার পেছনে ব্যবস্থাপনার দায় সিটি করপোরেশনের ওপরেই বর্তায় বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

সিটি করপোরেশনের হিসাবে, ঢাকা শহরে চার হাজারের মতো এমন পাড়াভিত্তিক কর্মী রয়েছেন, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করেন। তারা সবাই ছোট ছোট বেসরকারি সংস্থা বা আবাসিক সমিতি দ্বারা পরিচালিত। দিনের বেলায় তারা ময়লা সংগ্রহ করছেন। যদিও সেটি হওয়ার কথা সন্ধ্যায়। তারপরও প্রায় প্রতিটি এলাকা, ওয়ার্ডেই দেখা যায় কোনো না কোনো আবর্জনার স্তূপ।

গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ময়লা ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে, ফুটপাতেও। সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দয়াগঞ্জের মোড়ে এবং যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সরণি সড়কের মোড়ে ময়লার স্তূপ পেরিয়ে পথচারীদের নাক-মুখ ঢেকে যাতায়াত করতে। তারা অভিযোগ করেন, বছরের প্রতিটি দিনই আমাদের এভাবে ময়লার স্তূপ পেরিয়ে হেঁটে যেতে হয়। এই অভিযোগ শুধু দয়াগঞ্জ কিংবা যাত্রাবাড়ীর স্থানীয়দের নয়। রাজধানীজুড়ে বেশিরভাগ ওয়ার্ডের একই অবস্থা।

ধোলাইখালের চা দোকানদার বাদশা মিয়া অভিযোগ করেন, ‘প্রতিদিন ধোলাইখাল মোড়ে ময়লা ফেলা হয়, ভোরে এসব ময়লা নিয়ে যাওয়ার কথা; কিন্তু দু’দিন পার হয়ে গেলেও এই ময়লার স্তূপ সরানো হয় না। এত গন্ধ যে আমার দোকানে কাস্টমার বসতে পারে না। কাস্টমার কি, আমার তো নিজেরই মাঝে-মধ্যে বসতে কষ্ট হয়।’

রাজধানীর ৮৩ নম্বর ওয়ার্ড গেন্ডারিয়া-ফরিদাবাদে আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। বাসার সামনেই যে যেভাবে পারছে আবর্জনা ফেলছেন। সিটি করপোরেশনের গাড়ি আসে রাতে। সকাল থেকে বাসার সামনে পড়ে থাকা ময়লা বৃষ্টি হলেই ছড়িয়ে যাচ্ছে আশপাশে। পরিবেশ হচ্ছে দুর্গন্ধময়। 

স্থানীয় বাসিন্দা মাহিদুর রহমান জানান, ময়লা সংগ্রহের জন্য এখানে সিটি করপোরেশনের গাড়ি আসে দেরিতে। এমনকি দু-একদিনও লেগে যায় ময়লা সরাতে। অব্যবস্থাপনার কারণে বাসার সামনেই ময়লা ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, ‘ঢাকার একটা অদ্ভুত ব্যাপার রয়েছে। এখানে মেইন রোড, লেন, বাইলেন যেকোনো রাস্তা বলেন- সবখানে মুদি দোকান, হকার, চা বিক্রেতা, ফল বিক্রেতা বা কাঁচাবাজার রয়েছে। তারা সারাদিন ধরে রাস্তায় ময়লা ফেলতে থাকে। বাসা বাড়ি থেকেও ফেলা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন সকালে একবার ময়লা পরিষ্কার করে। সারাদিন ধরে ময়লা ফেললে শহরে তো আবর্জনা থাকবেই।’

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ‘শহরে যখন যথোপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করবেন তখনই আপনি প্রত্যাশা করতে পারেন- জনগণ যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলবে না। উপযুক্ত পরিবেশ, ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের যে নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট থাকার কথা, সেটিও এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিতভাবে পাওয়া যায়নি।’ 

নগরবাসীর যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলার পেছনে প্রধানভাবে ব্যবস্থাপনার দায় আছে বলেও মনে করেন এই নগরবিদ। তিনি আরো বলেন, ‘নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে এবং রাস্তা-ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সচেতনতা তৈরিতে সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে বিভিন্ন পদক্ষেপ।’

বর্জ্য অপসারণে নগর প্রশাসনের তৎপরতার অভাবে নানা ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে বলে দাবি পরিবেশবিদদের। বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘সারা ঢাকা শহরে এখন মশার উপদ্রব বাড়ছে। নগর প্রশাসন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে একটু নজর দিলে ডেঙ্গুসহ নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //