বিক্ষোভ থেকে অভিযোগ

দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার

দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঢাকায় এক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে।

সোমবার (২২ জুন) বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং এ আইনে গ্রেফতারদের মুক্তির দাবিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্লাটফর্ম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কর কর্মসূচিতে এই অভিযোগ করা হয়।

দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন ছাত্র ও অধিকার সংগঠনের নেতা-কর্মী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করবে বলে শুরু থেকেই অধিকারকর্মীরা দাবি করে আসছিল। মহামারিকালে তার প্রয়োগ নিয়েও সমালোচনা চলছে।

কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাধারণ মানুষকে অনিরাপদ করে রেখেছে। এই আইন দ্বারা সাধারণ মানুষের ওপর নিষ্পেষণ চালানো হচ্ছে। এই আইন নিরাপদ করছে তাদেরকে, যারা দুর্নীতি করছে, অনাচার করছে।

তিনি বলেন, এই করোনাভাইরাসের সময় অনেক দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। সরকার সেগুলো নিয়ন্ত্রণ না করে, যারা এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের এই আইনে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। যারা দুর্নীতি ও মাস্তানী করছে, এই দেশ তাদের জন্য একটি উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। আমরা সবাই সেই উপনিবেশের প্রজায় পরিণত হয়েছি। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে এই আইন কোনোভাবেই থাকতে পারে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, এটি একটি জঘন্য নিবর্তনমূলক আইন। অবিলম্বে এই আইন বাতিল করে স্বাস্থ্যখাতসহ দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বেঁচে থাকতে হলে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। কিন্তু কথা বলতে গেলে আপনাকে এই ডিজিটাল আইন দিয়ে সাংবাদিক কাজলের মতো জেলে যেতে হবে। আপনি সাংবাদিক হন, শিক্ষক হন বা সাধারণ নাগরিক হন, কারও জন্যই এই আইন নিরাপদ নয়।

বাবার মুক্তি চেয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ছেলে মনোরম পলক।

তিনি বলেন, আমার বাবা ৫৩ দিন নিখোঁজ ছিলো। তাকে খোঁজার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো তৎপরতা বা চেষ্টা চালায়নি। পরে যখন খোঁজ মিলে, তখন তাকে দুটি মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আমার বাবাকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। যখন তার জামিন আবেদন করা হয়, এই আইনের অজুহাত দিয়ে জামিন নামঞ্জুর করা হয়। আমরা এই আইন চাই না, যে আইন বাবাকে তার সন্তান থেকে দূরে রাখে।

ছাত্রনেতা রাশেদ শাহরিয়ার, সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম মুন্নাও কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন।

সোমবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, স্বাধীনতা চত্বর ও নিজেদের গৃহে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাতে সাড়া দিয়ে কর্মসূচি পালন করেন বলে আয়োজকরা জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //