জাবিতে ঈদের ছুটিতে লুকোচুরি করে ভবন নির্মাণের তোড়জোড়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া ভবন নির্মাণের চেষ্টা করায় বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পরতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। তাই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করার জন্য ঈদের ছুটিতে ফাকা ক্যাম্পাসকে বেছে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে ছুটিতে কাজ শুরু করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আজ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবনের পাশে জায়গা ঘেরাওয়ের কাজ চলছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণ কাজও শুরু হয়েছে। 

এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের কাজ এক মাস আগে শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তা স্থগিত ছিল।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগকে অনুষদে রূপান্তরিত করতে চান বিভাগীয় শিক্ষকরা। এ লক্ষ্যে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে অনুষদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার জন্য আল বেরুণী হলের বর্ধিতাংশের স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাংলাদেশ সরকার ও বাকী ৫০ কোটি টাকা ভারত সরকার অর্থায়ন করবে।

চারুকলা অনুষদের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি লেকের পাড়ে হওয়ায় এতে ছয়তলাবিশিষ্ট বহুতল এ ভবনের সুয়ারেজসহ অন্যান্য আবর্জনায় লেক দূষিত ও ভরাট হবে। আরেকদিকে কাটা পড়বে দুই শতাধিক গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লাইং জোনে বহুতল ভবন নির্মাণ হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়বে পরিযায়ী পাখির চলাচলের পথ। এছাড়াও দুই পর্বে নির্মাণ পরিকল্পনায় থাকা এ ভবনের পূর্ণাঙ্গ কাজ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দুটি অনুষদ ও ১টি ইন্সটিটিউটের ভবন নির্মাণের জায়গা নিয়ে তৈরি হবে বড় সংকট। 

সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার থিয়েটার তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার জন্য। কলা ও মানবিকী অনুষদের দুটি ভবন আছে। এরপর নতুন করে সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ কাজ হচ্ছে। তারপরও একটি বিভাগের জন্য এতবড় ভবন নির্মাণ যৌক্তিক নয়।

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি মাস্টারপ্ল্যান। কিন্তু আমাদের এই দাবি সব সময় উপেক্ষিত ছিল। অপরিকল্পিত ভাবে ভবন নির্মাণ করায় এখন আমাদের নতুন কলা ভবনের সামনের রাস্তা বন্ধ করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি আর চাইনা। তবে দুঃখের বিষয় এই  কাজগুলো শিক্ষকেরাই করছে। মাস্টারপ্ল্যান হতে এক বছরের মতো লাগবে। আমাদের দাবি আগামী এক বছর নতুন করে হাতে নেওয়া নির্মাণ কাজগুলো স্থগিত রাখতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পর কাজ শুরু করতে হবে।

এদিকে ছাত্র-শিক্ষক ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী কমিটির মতামতের উপর ভিত্তি করে ঈদের বন্ধে কাজ শুরু হবে না বলে পূর্বে জানালেও প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন এ বিষয়ে বলেন, আপাতত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেই।আমরা নকশা অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করছি, গাছগুলো দেখছি। সাইট ঘেরাও কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসা ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, আমাদের দাবি ছিল মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে ভবন নির্মাণ করো। কিন্তু তারা এই শপিং লিস্টের টাকার লোভ থেকে নিজেদের সরাতে পারছেন না। তারা শুধু আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন কাজ শুরু না হলে টাকা চলে যাবে। আদতে তারা জুজুর ভয় দেখিয়ে কাজগুলো শেষ করতে চাচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই তাদের এই তাড়াহুড়ো সামনের দিনে আমাদেরকে বড় আন্দোলনের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, চারুকলা বিভাগ অনুষদে রূপান্তরিত হবে। এখন তাদের নিজস্ব কোন জায়গা নেই, তাদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে‌ই এই ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //