উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে কুবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ-পদোন্নতিতে বিধিবহির্ভূত অবৈধ শর্তারোপ, পদোন্নতি বঞ্চিতকরণ, আইনের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে ডিন ও বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ, তথ্য গোপন করে ইনক্রিমেন্টের নামে অর্থ আত্মসাৎ, গবেষণা ফান্ড থেকে জালিয়াতি করে অর্থ লুটের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেছে কুবি শিক্ষক সমিতি।

আজ সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের পাদদেশে কুবি শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাছানের সঞ্চালনায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক আইনুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিদ্যমান আইন ছিল উপাচার্য প্রত্যেকটি আইনের অপপ্রয়োগ করেছেন। তিনি অবৈধভাবে ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, শর্তাবলির বাইরে গিয়ে  শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। প্রশাসনের তোষামোদকারী শিক্ষকদের সিনিয়র বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিনিয়র শিক্ষকদের জুনিয়র বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্যকে বলতে চাই, আমরা আপনাকে মাননীয় হিসেবেই রাখতে চাই। আমরা শিক্ষকরা অতিদ্রুত ক্লাসে ফিরে যেতে চাই। আমরা শিক্ষক সমিতি বারবার আপনার সাথে আলোচনায় বসতে চেয়েছি কিন্তু আপনি আমাদের বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমাদের দাবিগুলো ২৮ তারিখের ভেতর বাস্তবায়ন না হলে ক্লাস, পরীক্ষা চালু রেখেও আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে পারি।'

এসময় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আজকে কুবি অন্ধকারাছন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। কুবি উপাচার্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। যখন ২০০৭ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল, যখন ঢাবির প্রগতিশীল শিক্ষকরা শেখ হাসিনার পক্ষে আন্দোলন করেছিলেন, তখন বর্তমান উপাচার্য দেশত্যাগ করে ছিলেন। ২০১৩, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য  প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ আন্দোলন করেছিলেন, তখন তিনি কোথায় ছিলনে?"

তিনি আরও বলেন, ‘আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কোনো অবদান রাখেননি। আপনি বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য, শহিদ মিনারে দাড়িয়ে মিথ্যাচার করেন। আজকের ভার্সিটির নান্দনিক পরিবেশ পূর্বের উপাচার্যের অবদান। আপনি উন্নয়নের যে কথা বলেন, সবই  মিথ্যাচার। আগামীদিনে এই মানববন্ধনে কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থীরা সামিল হবে। যখন সবাই আপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে আপনি সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে পারবেন না।'

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘যোগদানের পর থেকেই তিনি যে অনিয়ম, দুর্নীতি,  স্বেচ্ছাচারিতা, বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, শিক্ষকদের এমনভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে যে আজ শিক্ষকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে।'

তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে শিক্ষকরা গ্রেড-১ এর জন্য আবেদন করলেও তিনি দুই বছরে শিক্ষকদের পদোন্নতি দেননি। উপাচার্যের ইন্ধনে এক বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গঠন করতে দেননি। ১৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনের পরে উপাচার্যের দপ্তরে দেখা করতে গেলে, সেখানে বহিরাগত, উশৃঙ্খল কর্মকর্তা এবং প্রক্টরের ইন্ধনে শিক্ষকদের উপর হামলা করা হয়েছে। যার বিচার আমরা এখনো পাইনি।'

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বিভাগে আইনের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে যেসব ডিন, চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন সেগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করি এরকম একজন সেচ্ছাচারী, এই ধরনের বৈষম্যমূলক ভিসিকে প্রত্যাহার করে নিন। উনি বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন।'

এসময় তিনি অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে যত আর্থিক কেলেঙ্কারি করেছেন সবকিছুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //