নারী সমাজের অনুপ্রেরণা কুবির শিক্ষিকা কাশমী সুলতানা

‘মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে তাহারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারী রূপে পরিচিত হইতে পারে।’- মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার এই বাণীর স্ব উজ্জল বাস্তব উদাহরণ যেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষিকা কাশমী সুলতানা।

বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির ছোট্ট একটি গ্রাম সালমানপুর। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জাদুঘরসহ পাহাড় সমতলের এই গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম ফকিরের ছোট্ট বাড়িতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা কাশমী সুলতানার। বাবা আবুল কাশেম ফকির পেশায় বাসচালক হলেও মেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হয়েছেন এ নিয়ে কাশমী সুলতানা, তার পরিবার যতটা উৎফুল্ল তেমনি আনন্দিত এলাকাবাসীরাও। স্থানীয় তরুণীদের কাছে এখন এক অনুপ্রেরণার নাম কাশমী সুলতানা।

পড়াশোনা, সংসার পরবর্তীতে মা হওয়া এবং শিক্ষিকা হয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের এই কঠিন কর্মযজ্ঞে প্রাথমিকভাবে হিমশিম খেলেও ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়েছেন কাশমী সুলতানা।

উনবিংশ শতাব্দীতে নারীশিক্ষার অগ্রযাত্রা বেগম রোকেয়ার উদ্যোগে আটজন ছাত্রী নিয়ে শুরু হয়ে বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে এসে তা বৈপ্লবিক পরিবর্তিত চিত্র প্রদর্শন করলেও এখনো বাংলাদেশের প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলে নারীদের উচ্চশিক্ষার হার সামাজিক ও পারিবারিক নানা জটিলতায় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। এরকম পরিস্থিতিতেও বাসচালকের পেশায় থাকা বাবার মেয়ে হয়েছেন দেশের অন্যতম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এ নিয়ে কাশমী সুলতানার পরিবার গর্বিত।

জীবনের এই অর্জনে সম্পর্কে কথোপকথনে কাশমী সুলতানা বলেন, বাবা বাসচালক এটা তাদের জীবনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। বাবা সার্টিফিকেটধারী না হলেও জীবনকে খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। বাবা তাদের পথপ্রদর্শক। ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবার কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কোন সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পেতে ব্যর্থ হই। পরবর্তীতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগে ভর্তি হই।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই মূলত আমার শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে। আর স্রষ্টার দয়ায় আজ ইচ্ছেও পূরণ হলো।

স্বপ্নজয়ের এই গল্পে কোন চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু আমার বাবা-মা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন ছিলেন তাই সত্যিকার অর্থে পড়াশোনা করাকালীন সময়ে তেমন কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু কর্মজীবন ও সংসার জীবন মোটামুটি একসাথেই শুরু করার দরুন সংসারের পাশাপাশি কর্মজীবনে নিজেকে এগিয়ে নেওয়াটাকেই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে। বিশেষ করে মা হবার পর ক্যারিয়ারের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়াটাই কঠিন মনে হয়েছিল। তবে এখন সামলে নিয়েছি।

তার এই পথচলায় অনুপ্রেরণার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান, শুরুতে বাবা মা এবং পরবর্তীতে বাবা মার পাশাপাশি স্বামীর অনুপ্রেরণাই সামনে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে আমাকে। আমার আজকের অবস্থান আমার পাশাপাশি আমার বাবা-মায়েরও প্রত্যাশা ছিল। বাবা মার চোখে যখন প্রত্যাশা পূরণের তৃপ্তি দেখতে পাই তখন আসলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //