ঢাবির ৬৮ শিক্ষার্থী-কর্মচারীকে বহিষ্কার

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৬৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মাঝে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ৭ জন এবং পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বের দায়ে ৬০ জনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। তাছাড়া প্রক্টর অফিসে কর্মরত একজন কর্মচারীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

গত রবিবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় শৃঙ্খলা পরিষদের সভার সুপারিশ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক সভায় বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সিন্ডিকেট সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারসহ সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হচ্ছেন- মৃৎশিল্প বিভাগের জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের মো আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের মর্তুজা হাসান খান, ইতিহাস বিভাগের মো. আজিম মাহমুদ তওসিফ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মো. রিয়াদ মাল এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মো. আব্দুল ওহেদ।

সাময়িক বহিষ্কারের চিঠি সংশ্লিষ্ট থানা, শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবক এবং স্থায়ী ঠিকানায় প্রেরণ করা হবে। বহিষ্কৃত এই ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কারাদেশ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় হলে অবস্থান করতে পারবে না। তাদের কৃত অপরাধের জন্য ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানো এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।

মৃৎশিল্প বিভাগের সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী জাহিদ শেখ ও মো. শাহরিন ইসলাম শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে আটক রেখে ১০ হাজার ঢাকা ছিনিয়ে নেয় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এই ঘটনায় ভিকটিম শিক্ষার্থীর পিতা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নামে লালবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে এই সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

সাময়িক বহিষ্কৃত ফলিত গণিত বিভাগের মো. আযহা ইসলাম, সংগীত বিভাগের মর্তুজা হাসান খান, ইতিহাস বিভাগের মো. আজিম মাহমুদ তওসিফ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মো. রিয়াদ মাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ শিখা চিরন্তনে ঘুরতে আসা দুইজন দর্শনার্থীকে এলোপাথাড়ি মারধর করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত এই চার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্লাটফর্ম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদে’ মল চত্বরের সংস্কার কাজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মো. আব্দুল ওহেদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া, ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা গ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রক্টর অফিসের মো. শামীম হোসেনকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রমাণিত হওয়ায় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইজনকে পরীক্ষাসহ তিন সেমিস্টার, ৪০ জনকে পরীক্ষাসহ দুই সেমিস্টার এবং ১৮ জনকে পরীক্ষাসহ ১ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //