শিক্ষার্থীকে বের করে দিলেন ছাত্রলীগ কর্মীরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের এক আবাসিক ছাত্রকে হলের বৈধ সিট থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে।

আজ শনিবার (১ এপ্রিল) আবাসিকতা নিশ্চিত ও নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রভোস্টের কাছে আবেদন করেন মাহাদী হাসান নামের ভুক্তভোগী ছাত্র। ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনার অভিযুক্তরা হলেন- বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তরুণ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ফাহিম ফয়সাল ও বাংলা বিভাগের রাজু। তারা সকলেই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী জানান, তিনি গত কয়েক মাস থেকে লালন শাহ হলে তার এক বন্ধুর কক্ষে গেস্ট হিসেবে থাকা শুরু করেন। পরে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই হলে আবাসিকতার জন্য আবেদন করেন। পরে লালন শাহ হলের ৪২৮ নম্বর কক্ষে তার সিট বরাদ্দ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ওই সিটে থাকা ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মুন ক্যাম্পাস থেকে চলে গেলে তিনি তার বরাদ্দ করা দুই সিটের কক্ষে নিজের জিনিসপত্র রেখে আসেন এবং অবস্থান শুরু করেন।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ মার্চ বাইরে থেকে কক্ষে গিয়ে দেখে তার তোশক-বালিশ ও বই-খাতাসহ অন্য জিনিসপত্র করিডোরে ফেলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরেকজন এসে তাকে জানান যে, হলের ৪২৭ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগকর্মী ফহিম তাকে ডেকেছে। ওই কক্ষে গেলে তিনি কোন রুমে থাকেন এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন ছাত্রলীগকর্মী তরুণ, ফাহিম ও রাজু। একপর্যায়ে তারা বলেন, ‘কে তোরে হলে তুলছে? এসব আবাসিকতার কাহিনী বাদ দে। আমরা যা বলব হলে তাই হবে।’ এছাড়া আরো বলেন তুই আমদের চিনিস? এখনো ভালোই ভালো ৪২৮ (কক্ষ) থেকে সবকিছু নিয়ে কোথায় যাবি যা।

পরে নিরুপায় হয়ে বৈধ কক্ষ থেকে বের হয়ে তার বন্ধুর কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে মাহাদী। শনিবার আবাসিকতা নিশ্চিত ও নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রভোস্টের কাছে আবেদন করেন তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফাহিম ফয়সাল বলেন, ‘আমরা তাকে হল থেকে বের করে দেইনি। বরং সে ৩০৮ নম্বর কক্ষে প্রায় দুই বছর ধরে অন্য একজনের আবাসিক সিটে থাকে। ওই আবাসিক সিটের ছেলেকে যখন ৪২৮ নম্বর কক্ষে দেয়া হয় তখন তিনি ওই কক্ষের আবাসিকতা দাবি করে। তাকে বলা হয়েছে, তুমি তো ৩০৮-এ থাকো, এখন এখানে কেন? তুমি ওখানেই থাকো বলে তার জিনিস নিয়ে যেতে বলি।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে সিট থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। কারণ সে ওই সিটে ওঠেনি। আর আমরা কোনো আবাসিক ছাত্রকে হলে উঠতে বাঁধা দেই না। আমরা সবসময় বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে সাহায্য করি।’

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা ৪২৮ নম্বর কক্ষে আবাসিকতা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই কক্ষে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের একজন থাকায় তিনি হল ছেড়ে দিলে সেখানে উঠতে বলা হয়েছিল। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। দুই পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’

উল্লেখ্য, এর আগেও আবাসিক শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ করা সিটে ওঠাতে গিয়ে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়ে লালন শাহ হল প্রশাসন। দফায় দফায় ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে কথা বলার পরেও এর সমাধান মেলেনি ওই সময়ে। বছরের পর বছর ঘোরার পরেও বৈধ আবাসিক সিটে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে একাধিক শিক্ষার্থীর।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //