বিক্ষোভে উত্তাল চবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল ছাত্র ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সবমিলিয়ে, এই ঘটনায় বর্তমানে বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন বহন করেন।

মো. মামুনুর রহমান নামে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আমাদের এ আন্দোলন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফি নিতু দাবি করেন, ‘কারা ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করে তা ক্যাম্পাসে ওপেন সিক্রেট (সবাই জানে)। জড়িতরা বাইরের কেউ নয়। ভুক্তভোগী জানিয়েছে, জড়িতরা চবির গণ্ডির ভেতরের। বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের ৫-৬ জন অনুসারী এই ঘটনা ঘটিয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন যেন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রশাসন চার দিনের মধ্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারছেন না। এ কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন।

রেজাউল হক রুবেল দাবি করেন, ‘যারাই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করেছে তাদের খুঁজে বের করে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে এই দাবি জানাচ্ছি। জড়িতরা আমার-আপনার যার অনুসারী হোক না কেন তাদেরকে অপরাধী হিসেবে দেখতে হবে। এ ঘটনায় যে পাঁচ জন জড়িত বলে বলা হচ্ছে- তাদেরকে অবশ্যই শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এটা নিয়ে অপরাজনীতি না করার অনুরোধ করছি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘এ ঘটনা কে কার লোক ঘটিয়েছে তা দেখার বিষয় নয়, এমন জঘন্য কাজে জড়িতদের অবশ্যই অপরাধী হিসেবে দেখতে হবে। থানা পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। শাস্তির মুখোমুখি করা হোক।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘বুধবার রাতেও আমরা আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সাথে কথা বলেছি। অবশ্যই ছাত্রীর সাথে যৌন হেনস্তায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। ছাত্রীরা আমাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে হলে ফিরে গেছে। আজ যারা সকাল থেকে আন্দোলন করছে আমরা তাদের সাথেও কথা বলছি। তাদেরকেও আমরা বোঝাতে সক্ষম হব।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে আমি নিজেই সদস্য সচিব হিসেবে আছি। আমরা দায়ীদের বের করার চেষ্টা করছি। আশা করি সফল হবো।  

এর আগে, বুধবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন হলের ছাত্রীরা। রাত ৯টা থেকে প্রথমে বিভিন্ন হলের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। রাত ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে রাত ১টা পর্যন্ত দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

তাদের দাবি অনুযায়ী জড়িতদের চার কার্যদিবসের মধ্যে শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান। অন্যথায় অন্যদের সাথে নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

এর আগে রবিবার (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। এই ঘটনায় নানা আলোচনার মধ্যে গত ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হলে রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অকার্যকর যৌন নিপীড়ন সেল কার্যকর করা, রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশ বাতিল করা ও চার দিনের মধ্যে চলমান সব হয়রানির ঘটনার বিচার করা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //