গণ বিশ্ববিদ্যালয় : ৩২ একরের নতুন বাড়ি

‘বিশ্ববিদ্যালয় মানেই মজা আর মজা’ কিংবা ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চাপ নেই’ এমনটা শুনে শুনেই পাড়ি দিতে হয় স্কুল কলেজ। মাধ্যমিক উচ্চ-মাধ্যমিকের দীর্ঘ পথ পাড়ির পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেমন হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে থাকে হাজারো কৌতুহল, উদ্দীপনা। স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্যেই কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে আসে পড়তে। বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নতুন পরিচয়, নতুন বাড়ি।

সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নবীনদের পদচারনা! একদল প্রাণবন্ত, চঞ্চল নতুন মুখের আনাগোনা পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। প্রতিবছর একঝাঁক নতুন শিক্ষার্থীর আগমন মাতিয়ে রাখে এই শিক্ষাঙ্গন। স্বল্প সময়ে প্রিয় গবি ক্যাম্পাসকে কতটুকু আপন করে নিতে পেরেছে নবীন শিক্ষার্থীরা সেই গল্প আর অনুভূতির কথা জানা যাক।

যদি দিনটা না শেষ হতো

বাবার স্বপ্ন, মায়ের নির্দেশনায় একরাশ শঙ্কা, রোমাঞ্চ, উদ্দীপনা নিয়েই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন। অনেক কৌতুহলের পাশাপাশি মনে ছিলো কিঞ্চিৎ ভয়। বাড়ি থেকে দূরে পড়তে এসে পেয়েছি আরেকটি বাড়ি। এ বাড়িতে আইন বিভাগ এমন একটি পরিবার, যেখানে শিক্ষা, শাসন,ভালোবাসা সবই বিদ্যমান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সকাল সোনালী আলোর মতো দীপ্ত। প্রতিটা দিন মুক্তঝরা দিন। এমন মনে হয়, যদি দিনটা না শেষ হতো, তাহলে বুঝি ভালোই হতো। আমি আইন বিভাগের ছাত্র হিসেবে আমার মেধা ও শ্রমকে দেশের সমৃদ্ধি সাধনে ও দেয়ালবৃত্তে বন্দী মানুষের কষ্ট লাঘবে নিবেদন করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে আমার জীবনের আসল অর্থ উপলব্ধি করতে শেখাচ্ছে। আমি চাই এই দারুণ দিনগুলো যেন আজীবন আমার স্মৃতিতে থাকে।

রাকিব আল হাসান শরৎ, ২৬ তম ব্যাচ, আইন বিভাগ

সকলের মেলবন্ধন ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে

স্কুল-কলেজের গণ্ডী পেরিয়ে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য হলো। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ছুঁয়েছি আমি। প্রথমদিন এক অন্য রকম মিশ্র অনুভুতি কাজ করছিলো। প্রথম ক্লাসেই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমার ধ্যান-ধারণা পালটে যেতে শুরু করলো। স্যারের অদ্ভুত লেকচার এবং এত এত কোর্স দেখে ঘাবড়ে গেলাম। তখন মনে পড়লো কে যেন বলেছিল-‘ভার্সিটিতে শুধু মজা আর মজা। ডিপার্টমেন্টে সিনিয়রদের থেকে পেয়েছি শাসন আর ভালোবাসার মিশ্রিত এক অনুভূতি!’ বুঝতে বাকি রইলো না যে বিশ্ববিদ্যালয় মোটেও স্কুল-কলেজের মতো নয়।

স্কুল-কলেজের মতো কেউ এখানে বলবে না ‘তোমার ইউনিফর্ম কোথায়?’ হয়তোবা এই মিশ্র অনুভুতি এবং এত এত কোর্সের প্যারাময় সমুদ্রের মাঝেই লুকিয়ে আছে সেই স্বপ্নের সিঁড়ি। প্রিয় ক্যাম্পাসের মাঠ, বাদামতলা, নানীর টং দোকান, সকলের মেলবন্ধন সত্যিই যেন আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে।

অর্ণব উজ-জামান, ৩৪তম ব্যাচ, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে ওঠা শিখিয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়

‘স্কুল জীবন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়’ শব্দটা শুনলেই এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে। কলেজ জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নটি এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখানে একেকটি ডিপার্টমেন্ট একেকটি পরিবারের মতো। ডিপার্টমেন্টের সব বড় ভাই এবং আপুরা খুবই ফ্রেন্ডলি। তারা খুব চমৎকারভাবে শেখায় কিভাবে সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে উঠা যায়। গণ বিশ্ববিদ্যালয় আমার দৃষ্টিতে দেশের সুন্দরতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে একটি। 

সবুজের ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গা আমাকে মোহিত করে। এই কয়েক দিনে শিখেছি অনেক কিছু। আমার মতে, এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে শিক্ষা, সেটাকে অর্জন করে নিতে হবে। এখানে প্রতিটি দিন কেটে যাচ্ছে আনন্দ ও উচ্ছলতায়। আমি বিশ্বাস করি এখান থেকেই আমি আমার স্বপ্নের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হবো।

শেহালা ফাহরিয়া অথৈ, ১৪তম ব্যাচ, বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ

প্রিয় ক্যাম্পাসে পা রেখে সৌভাগ্যবান মনে হয়েছে

‘করোনা মহামারীতে’ চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনুজীব বিজ্ঞানীদের ভূমিকা ঠিক কতখানি তা উপলব্ধি করতে পেরেছি। সেখান থেকেই স্বপ্ন মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে অণুজীব বিজ্ঞানী হিসবে গড়ে তোলা। এ জন্য আমার পছন্দ গণ বিশ্ববিদ্যালয়। কেনো না এখানে রয়েছে উন্নত লাইব্রেরি এবং ল্যাব। এছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং অবকাঠামো খুবই মনোমুগ্ধকর। ক্রীড়ার দিক দিয়েও অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটি অনেক এগিয়ে।

প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষক-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট সবাই খুবই সহায়তা করে থাকেন। স্কুল ও কলেজ জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রিয় ক্যাম্পাসে পা রেখে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে হয়েছে। ক্যাম্পাস লাইফের প্রথম দিনগুলো সারা জীবন মনে রাখার মতো। নতুন করে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া, নতুন মুখের সাথে পরিচিত হওয়া, এভাবে তৈরি হয় এক নতুন বন্ধন। গবির ক্যাম্পাস পুরোটাই সবুজে ঘেরা যা খুব কম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায়। এমন সুন্দর পরিবেশে পড়তে পেরে আমি খুবই খুশি। আশা রাখছি নিজের প্রচেষ্টা এবং শিক্ষকদের গাইডলাইনে খুব ভালো কিছু করতে পারবো।

মুনিয়া রহমান জান্নাত, ৪২তম ব্যাচ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //