বাজেটের আকার কমল ৬২ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি ব্যয় কমানো হয়েছে ৬১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কাটছাঁট শেষে সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৫ কোটি টাকা। সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে এবং মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয়ে সংকোচনমূলক নীতি নিয়ে বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট করল অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশোধিত বাজেটের আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। 

সংশোধিত বরাদ্দের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় বিল গ্রহণ করার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে উল্লেখ করা হয়, এর পরও যদি প্রয়োজনে কোনো খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ অর্থ বিভাগ অনুমোদন করে তাহলে তা এই সংশোধিত কর্তৃত্বের অংশ হিসেবে গণ্য হবে। এসব ক্ষেত্রে পরে সম্পূরক বা অতিরিক্ত আর্থিক বিবৃতির মাধ্যমে যথাসময়ে নিয়মিত করা হবে। 

চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দেয় সরকার। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো বেশ চাপে ছিল। এ অবস্থায় সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের কাটছাঁট করে বাজেট সংশোধনে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রস্তাব দেয় অর্থ বিভাগ। ওই সভায় সম্মতি পেয়ে অর্থ বিভাগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে গত বুধবার সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করে। এবার মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেটের আকার কমলো ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছর এ হার ছিল মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ নেই। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ স্বীকৃতি ৫টি মুদ্রার সমন্বিত একক এসডিআরের (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) সঙ্গে ইউএস ডলার ও ব্রিটিশ পাউন্ডের বিনিময় হার এবং ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের দায় অনেক বেড়ে গেছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকার নতুন গাড়ি কেনা, ভূমি অধিগ্রহণ বন্ধ, আপ্যায়ন, ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ব্যয়, উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানী স্থগিতসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয় নীতি নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

এ ছাড়া গত ১১ মার্চ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমিয়ে সংশোধন করা হয়। মূল এডিপির তুলনায় মোট বরাদ্দ কমেছে ১৮ হাজার কোটি। কাটছাঁট শেষে সংশোধিত এডিপি বা আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।  

এদিকে গত অক্টোবরে এডিপি থেকে ১১ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ স্থগিত করতে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। এ তহবিলে অর্থ খরচ হয়নি, তাই সংশোধিত বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। 

সংশোধিত বাজেটে সরকারি ব্যয়ে বড় কাটছাঁট করা হলেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা সে হারে কমানো হয়নি। কারণ আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চলতি অর্থবছর সরকারকে কর-জিডিপির অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়াতে হবে। সে অনুযায়ী আইএমএফ চলতি অর্থবছরে কর আদায় ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ বাড়াতে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। করের প্রায় পুরোটাই আহরণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মূল বাজেটের চেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া এনবিআরবহির্ভূত কর এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ হাজার কোটি থেকে কমিয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারের সার্বিক রাজস্ব আদায় ৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সাবেক সচিব মাহবুব আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বেশ চাপে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় কমানোর কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া বাড়তি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে সংকোচনমূলক নীতিতে বাজেটও সংশোধন করা হয়েছে। সাময়িকভাবে এটা ঠিক আছে। তবে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে যাবে। এ উন্নয়ন টেকসই করতে বাড়তি সরকারি ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। তাই আগামীতে রাজস্ব বাড়াতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //