ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কবলে দেশের অর্থনীতি

দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপে যেমন কিছু খাতে অস্থিতিশীলতা রয়েছে, তেমনি ভূরাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ব্যবসা, বাণিজ্য এবং ভোক্তা অর্থায়নে ঋণ প্রবাহ হ্রাসের কারণে এসব খাতে কিছু নেতিবাচক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে এসব খাতে লাগাম টানা হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে মিশ্র প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কমেছে ঋণ প্রবাহ। কিন্তু বাড়তে শুরু করেছে আমানত প্রবাহ। বিধিবদ্ধ আমানত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে অতিরিক্ত তারল্য।

গতকাল বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক ত্রৈমাসিক শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

তিন মাস পর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাম ও শহর দুই ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। আর এ উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্রদের মধ্যে এর আঘাত বেশি আসছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা কমার কারণে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির প্রায় সব সূচকগুলোকেই আঘাত করছে। এ কারণে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণকেই এখন সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা করা হয়েছে মূলত মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কর্মসূচিকে সামনে রেখে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ডবল ডিজিটে রয়ে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতির বড় অংশই আসছে খাদ্য ও জ্বালানি খাত থেকে।

বৈদেশিক মুদ্রা আয় ব্যয়ের পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চেয়ে আয় বেড়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে এখন উদ্বৃত্ত হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক ভারসাম্যের আর্থিক হিসাবে এখনো উচ্চতর ঘাটতি রয়েছে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো নিম্নমুখী হচ্ছে। এতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হারের একটি লক্ষ্যভিত্তিক নীতি বাস্তবায়ন করছে। ফলে সব খাতেই সুদ হার বাড়ছে। নীতি সুদ হারও বাড়ানো হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতিতে চাপ কিছুটা কমতে পারে। কারণ নীতি সুদ হার বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারের প্রবণতা কমবে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে টাকার প্রবাহ কমবে।

জানা যায়, বাস্তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধারের প্রবণতা কমেনি। বরং বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সামগ্রিক রাজস্ব আহরণ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শুল্কভিত্তিক পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণ কমছে। তবে সরকারি ব্যয় কমানোর ফলে রাজস্ব আয় কমলেও সরকারের কেন্দ্রীয় হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষে ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেট উদ্বৃত্ত রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীতে অর্থনৈতিকভাবে একটি টেকসই পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা রয়েছে, যা কৃষি ও শিল্প খাতের মাধ্যমে সম্ভব বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //