রেমিট্যান্সে আমিরাতের প্রবাসীদের চমক

দ্বিগুণ প্রণোদনার ঘোষণায় আবার সচল হতে শুরু করেছে দেশের রেমিট্যান্সের চাকা। অক্টোবরে এসেছে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এ মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

বরাবরই সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে সৌদি আরব থেকে। গত কয়েক বছর ধরে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর তৃতীয় স্থানে ছিল আরব আমিরাত। যুক্তরাজ্য ছিল চতুর্থ অবস্থানে।

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশভিত্তিক রেমিট্যান্সের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সব দেশকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে আরব আমিরাত। এই চার মাসে সৌদি আরব থেকে এসেছে ১০৬ কোটি ৭৯ লাখ (১.০৬ বিলিয়ন) ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ৬৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৮২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফনের আভাস গত অর্থবছরেই পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্স ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়; আসে ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার (৩.০৩ বিলিয়ন) ডলার। যা ছিল আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে তিনটি দেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। বাকি দুটি দেশ ছিল সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র।

গত অর্থবছরের কয়েক মাসে সৌদি আরবের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাত থেকে বেশি রেমিট্যান্স এলেও বরাবরের মতোই অর্থবছর শেষে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে।

তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ কম ছিল; ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ (৪.৫৪ বিলিয়ন) ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে; ৩৫২ কোটি ২০ লাখ (৩.৫২ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে তৃতীয় স্থানে ছিল আরব আমিরাত। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২০৮ কোটি (২.০৮ বিলিয়ন) ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ৬৮৮ কোটি ৪৫ লাখ (৬.৮৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

গত বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৭১৯ কোটি ৮৪ লাখ (৭.২০ বিলিয়ন) ডলার। এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই চার মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় কমেছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সের এই ইতিবাচক ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ জানতে চাইলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, ২০২২ সালে আমরা প্রায় ১১ লাখ লোককে কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। এই সংখ্যা অতীতের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি গেছেন আরব আমিরাতে। তারই ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশটি থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহে। গত বছর যারা গেছেন, তারা এখন পুরোদমে কাজ করছেন এবং বেতন-ভাতা পেয়ে দেশে পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখন বেশ চড়া। তাই তেলনির্ভর অর্থনীতির দেশ আমিরাতের অর্থনীতিতেও চাঙাভাব বিরাজ করছে। সেখানকার শ্রমিকরা ভালো বেতন পাচ্ছেন। বেশি টাকা দেশে পাঠাতে পারছেন। সে কারণেই দেশটি থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //