যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়া কতটা উদ্বেগের

২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২১.৭৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত বছর যা ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭৩ কোটি মার্কিন ডলারে উঠেছিল। অর্থ্যাৎ, চলতি বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো কমছে। 

তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের এই মূল বাজারে চাহিদা কম থাকায় রপ্তানির পরিমাণ কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এককভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পোশাকের প্রায় এক পঞ্চমাংশের গন্তব্য এই বাজার। বর্তমানে দেশটির বাজারে চীন ও ভিয়েতনামের পর তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এরপর পর্যায়ক্রমে যে সাত দেশ রয়েছে, সেগুলো হলো ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, পাকিস্তান ও কোরিয়া। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে এই ১০ দেশেরই পোশাক রপ্তানি কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে চীন ও পাকিস্তানের।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (অটেক্সা) হালনাগাদ  পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৫ হাজার ৩৪৫ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেন। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২দশমিক ৭৭ শতাংশ কম।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৫১৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম আট মাসে দেশটিতে ৬৬২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ওই সময় প্রতি বর্গমিটার কাপড়ে তৈরি পোশাকের দাম ছিল ২ দশমিক ৯৭ ডলার। চলতি বছর প্রথম আট মাসে তা বেড়ে ৩ দশমিক ২৭ ডলার হয়েছে। তার মানে, পোশাকের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে চীন। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চীন ১ হাজার ৯৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের রপ্তানি কমেছে ২৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ে চীন রপ্তানি করে ১ হাজার ৫৫৭ কোটি ডলারের পোশাক।

এদিকে ভিয়েতনাম আলোচ্য সময়ে ৯৬৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। গত বছরের প্রথম আট মাসে ভিয়েতনাম ১ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে যথাক্রমে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ভারত ৩২৬ ও ইন্দোনেশিয়া ২৮৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে ভারতের রপ্তানি ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার ২৬ দশমিক ০৯ শতাংশ কমেছে।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন থেকেই দেশটিতে পোশাকের চাহিদা কম। এ কারণে ক্রয়াদেশও কম। মূল্যস্ফীতি কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি। আগামী বছরের শেষ দিকে দেশটিতে নির্বাচন। তত দিন পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে আমাদের ক্রেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে আমেরিকার ক্রেতারা বর্তমানে উচ্চ সুদহারের মুখোমুখি; তাদের ক্রয় ক্ষমতা ক্রমবর্ধমান মর্টগেজ রেট দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে; তবে বছরের শেষ নাগাদ অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এখন দেশে কিছু হাই-ভ্যালু আইটেম উৎপাদিত হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখাতে সাহায্য করবে।

এছাড়া, সামনের দিনে মার্কিন বাজারে রপ্তানি আরও বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ফারুক হাসান। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতারা ইতোমধ্যেই তাদের স্টোর খালি করেছেন, ফলে আগামী দিনে তাদের কাছ থেকে নতুন অর্ডার আসতে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //