চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পেল ভারত

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে নিজ দেশে পণ্য পরিবহনের বাণিজ্যিক অনুমতি পেল ভারত। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এ বিষয়ে স্থায়ী ট্রানজিট আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের স্থায়ী আদেশে বলা হয়েছে, ‌‘‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পাদিত 'অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অফ চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অফ গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়ার’ আওতায় উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট পণ্যের কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।’’

ফলে ভারত এখন থেকে বন্দর দুটি ব্যবহার করে নিজ দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। চট্টগ্রাম-আখাউড়া-আগরতলা, মোংলা-আখাউড়া-আগরতলা, তামাবিল-ডাউকি, শেওলা-সুতারকান্দি এবং বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর রুটে ১৬টি ট্রানজিট রুট খোলা হয়েছে।

ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য অপারেটরকে বাংলাদেশ কাস্টমস থেকে পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স নিতে হবে। বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ কোনো পণ্য পরিবহন করা যাবে না। বাংলাদেশের বন্দরে সাত দিনের বেশি ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য রাখা যাবে না।

বন্দরে পণ্য পৌঁছার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বাংলাদেশ কাস্টমসকে জানাতে হবে। বিল অফ এন্ট্রি, কমার্শিয়াল ইনভয়েস এবং প্যাকিং লিস্টসহ সম্পূর্ণ ডকুমেন্টেশন কাস্টমসের কাছে জমা দিতে হবে এবং ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কাস্টমস ডিউটি ​​পরিশোধ করতে হবে, চার্জ, ফি এবং চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। সমস্ত চালান পণ্য ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে সিল করতে হবে। 

আদেশে বলা হয়েছে, প্রতি চালান ডকুমেন্ট প্রসেসিংয়ের জন্য ৩০ টাকা, ট্রান্স-শিপমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতিটন পণ্যের জন্য ২০ টাকা, টনপ্রতি সিকিউরিটি চার্জ ১০০ টাকা, প্রতি কন্টেইনার এসকর্ট চার্জ ৮৫ টাকা, টনপ্রতি অন্যান্য প্রশাসনিক চার্জ ১০০ টাকা এবং প্রতি কন্টেইনার স্ক্যানিং চার্জ বাবদ ২৫৪ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া, ইলেকট্রিক লক এবং সিলের জন্যেও নিয়ম অনুযায়ী চার্জ প্রদান করতে হবে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় কম খরচে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পেতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের সঙ্গে এসিএমপি চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত।  

এই ট্রান্সশিপমেন্ট ব্যবস্থায় কম খরচে ভারী কার্গো পরিবহনের সুবিধা পাবে দেশটি।

চুক্তির অধীনে ২০২০ সালের জুলাইয়ে চার কন্টেইনার বোঝাই রড এবং ডাল নিয়ে কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে প্রথম ট্রায়াল রান হয়। ভারত-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দরকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে সংযুক্ত করার চতুর্থ ও সর্বশেষ ট্রায়াল রানটি হয়েছিল ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর। 

বাংলাদেশের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরের বিকল্প হিসেবে মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায় ভারত। এনবিআরের ক্লিয়ারেন্স পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্রানজিট চুক্তির আওতায় কলকাতা থেকে গুয়াহাটি হয়ে আগরতলা পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে ১,৬৫০ কিলোমিটারের কিছু বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে ভারতকে। 

আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে খরচ কমার পাশপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যের পরিমাণও বাড়বে।

এতদিন পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনে অনেক সময় লাগতো ভারতের। বাংলাদেশের এই দুই বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন করলে সময় ও খরচ দুটোই কমে আসবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //