ভারতে জিডিপিতে ধস, সংকোচন প্রায় ২৪%

আশঙ্কা ছিলই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছিলেন ভারতের জিডিপিতে ধস নামতে পারে। সেই আশঙ্কা সত্যি হলো।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে বা প্রথম আর্থিক কোয়ার্টারে মোট দেশজ উ‌ত্পাদনের (জিডিপি) সংকোচন হয়েছে ২৩.৯ শতাংশ। জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর এই হিসাব দিয়েছে। গত ৪০ বছরে জিডিপির এতটা সংকোচন কখনো হয়নি।

গতকাল সোমবার (৩১ আগস্ট) ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস (এনএসও) চলতি অর্থ বছরের (২০২০-’২১) প্রথম তিন মাস- এপ্রিল থেকে জুনের আর্থিক বৃদ্ধির হার প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, সময়ে ভারতের অর্থনীতি ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হয়েছে।

১৯৯৬ সাল থেকে ত্রৈমাসিকের হিসেবে জিডিপি হার প্রকাশ শুরু হয়েছিল। গত আড়াই দশকে কখনওই জিডিপি বৃদ্ধির হার শূন্যের নিচে নামেনি। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আর্থিক বৃদ্ধির হার মুখ থুবড়ে পড়ার কারণেই ডিজিপির এই পতন।

জুলাই-সেপ্টেম্বরে অর্থনীতির এই সঙ্কোচন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। এর ফলে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে কবলে পড়তে পারে।

চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের বড় সময়েই লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনীতি কার্যত অচল ছিল। ফলে জিডিপির সঙ্কোচনের এমনকি, আর্থিক বৃদ্ধির হার শূন্যের নিচে থাকার বিষয়টিরও আঁচ মিলেছিল। মতভেদ ছিল শুধু অর্থনীতির বহর বা জিডিপির কতটা সঙ্কোচন হয়েছে, তা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও অর্থমন্ত্রণালয়ের আশা ছিল জিডিপির সঙ্কোচন যেন কম হয়। সেক্ষেত্রে আর্থিক বৃদ্ধির হার পুনরুদ্ধার করা তুলনায় সহজ হতে পারে। কিন্তু সোমবার প্রকাশিত পরিসংখ্যান সেই আশায় কার্যত জল ঢাললো।

২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.১ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের গোড়া থেকেই শুরু হয় অধোগতি। বস্তুত করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকেই ভারতীয় অর্থনীতিতেও ঝিমুনি চলছিল। অটোমোবাইল, উৎপাদন, পরিষেবা থেকে শুরু করে প্রায় সবক্ষেত্রেই ঘনিয়ে আসছিল অশনি সংকেত।

২০১৯-’২০ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল ২০১৯-মে ২০১৯) আর্থিক বৃদ্ধি আগের বছরের থেকে নেমে দাঁড়ায় ৫.২ শতাংশে। তারপর সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার আরো কমে হয় ৪.৪ এবং ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া তৃতীয় ত্রৈমাসিকে নেমে যায় ৪.১ শতাংশে। আর শেষ ত্রৈমাসিকে (২০২০-র জানুয়ারি-মার্চ) সেই বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছিল প্রায় ৩ শতাংশে।

সামগ্রিকভাবে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.২ শতাংশে নেমে আসে। নিম্নগামীতার নিরিখে যা ছিল গত ১১ বছরের রেকর্ড। শুধু ভারত নয়, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) করোনাভাইরাসের অভিঘাতে বিশ্বজুড়ে ধাক্কা খেয়েছে আমদানি-রফতানি, কল-কারখানায় উৎপাদন। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশে হোটেল, পর্যটন, বিমান, রেস্তোরাঁ পরিষেবা ব্যবসা।

ফ্রান্সের জিডিপি নেমেছে প্রায় ১৪ শতাংশে, ইতালির ১২.৪ শতাংশে, স্পেনের ১৮.৫ শতাংশে ও ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানির ১০.১ শতাংশ। ১৯টি দেশের ইউরোপীয় অঞ্চল (যাদের মুদ্রা ইউরো) ধরলে তা ১১.৯ শতাংশ। ২৭ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি কমেছে ১২ শতাংশের বেশি।

ভারতের মতোই যুক্তরাষ্ট্রে জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে প্রাক-করোনাপর্বে জিডিপি ৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তা গত অর্থবর্ষের একই সময়সীমার নিরিখে ৩৩.৯ শতাংশ কমেছে। -আনন্দবাজার পত্রিকা ও ডয়চে ভেলে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //