ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে নারীকর্মী বাড়ছে

ব্যাংকের চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এমনকি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে বসে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তারা। একসময় মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নারী ছিল ১০ শতাংশের নিচে। এখন সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশে।

ব্যাংক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ লিঙ্গসমতাবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৫৬৭ জন। বর্তমানে নারী কর্মকর্তার হার ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৯৩৯। সে সময় ব্যাংকে নারী কর্মকর্তার হার ছিল ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর ২০২১ সালে ছিল ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। ব্যাংকে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবেও নারীদের দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ের পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাংকে যারা ক্যারিয়ার শুরু করছেন, তাদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী। ব্যবস্থাপনার মধ্যম স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী। আর ব্যাংক খাতে বোর্ড সদস্য বা পরিচালক হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ ১৪ শতাংশ।

তথ্য বলছে, রাষ্ট্রের মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উচ্চপর্যায়ে নারীরা বেশি কর্মরত আছেন। এসব ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে থাকা বিদেশি ব্যাংকগুলোতে উচ্চ পদে নারীদের অংশগ্রহণ ১৩ শতাংশ। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের উচ্চ পদে কর্মরত কর্মীদের মধ্যে নারীর হার ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ।

অর্থাৎ নীতিনির্ধারণেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সরকারি ব্যাংকগুলোয় নীতিনির্ধারণের জন্য পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। নারী উদ্যোক্তা, সাবেক নারী ব্যাংকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় মালিকদের স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ ও ঘনিষ্ঠজনদের পরিচালক হিসেবে দেখা যায়।

চলতি বছর সরকার রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগসংক্রান্ত নতুন এক নীতিমালা করেছে। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের এক-তৃতীয়াংশই থাকবেন নারী। এ ছাড়া সরকারের শেয়ার রয়েছে এমন বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

ব্যাংকে নারীদের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় অংশীদার হলো দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বর্তমানে ৩২ হাজার ৫৬৭ জন নারী ব্যাংক খাতে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ২১ হাজার ৮৭৯ জন কাজ করছেন দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা ৭ হাজার ৯৪৬, বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকে ১ হাজার ৭৭২, বিদেশি মালিকানায় থাকা ৯ ব্যাংকে ৯৭০ জন নারী কর্মী কর্মরত রয়েছেন।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকগুলোতে প্রচুর নারী কর্মী যোগ দেন। কিন্তু পরে তাদের একটা অংশ চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। মূলত কাজের চাপ সামলাতে না পারা ও সন্তান লালন-পালনের জন্য ব্যাংকের চাকরি ছাড়েন তারা। তবে অনেক সময় এমনও হয়ে থাকে, পরিবার কিংবা সমাজ থেকে নেতিবাচক মনোভাবের কারণেও নারী ব্যাংকাররা মাঝপথে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন।  সে জন্য উচ্চপর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ যেভাবে এগোনোর কথা ছিল, ঠিক সেভাবে এগোচ্ছে না।

দেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে নারী কর্মীদের হয়রানি বন্ধে সব ব্যাংক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করেছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেছে ৬০টি ব্যাংক। সব ব্যাংকের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ব্যাংকে নিজস্ব পরিবহন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ৩৬টি ব্যাংকে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবা-যত্ন স্থাপন করেছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //