ঋণের সুদের হারে নতুন নিয়ম

ছয় মাস ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ব্যাংকের ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হবে।

আজ রবিবার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের আলোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সভা সূত্র জানায়, ৬ মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদের হার ৬ দশমিক ৯৯। ফলে এখনকার হিসাবে ঋণের সুদ হতে পারে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। জুলাইয়ের মুদ্রানীতিতে ব্যাংকের ঋণের ক্যাপ উঠিয়ে দেয়া হবে। তবে ব্যাংকঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার কত হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতি মাসে নির্ধারণ করে তা ঘোষণা করবে। এ হার ঠিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নির্ধারিত সূত্র অনুসরণ করবে। নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে আগামী জুলাই মাস থেকে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘শর্টটার্ম মান্থলি এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট। সুদের হার নির্ধারণ করা হবে ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের সুদের হারের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ যোগ করে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে ট্রেজারি বিলের সুদের বাড়লে ঋণের সুদের হার বাড়বে। আবার সুদের হার কমলে ব্যাংকের ঋণের সুদের হার কমবে। রেফারেন্স রেটের সঙ্গে একটি করিডোর দেয়া হবে। ‘স্মার্ট রেট’ নামে নতুন একটি রেট আসবে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে ব্যাংকঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক দিন ধরে ব্যাংকের ঋণের সুদের ক্যাপ তুলে দেয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে, তাতে এসব সংস্কার আনার শর্ত দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুদহার করিডরব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুদহার করিডর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহারে পরিচালনভিত্তিক পরিবর্তন করা যায়। গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক বৈঠকে ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে গতকালের সভায় ব্যাংকের ঋণের সুদের হারের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘ট্রেজারি বিলের ছয় মাসে সুদের সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ স্প্রেড যোগ করা হলে ব্যাংকের সুদের হার বিসাবে নির্ধারণ করা হবে।’

এছাড়া ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) রেমিট্যান্সে দর ১০৭ টাকা নির্ধারণ করে। এই রেট মেনেই সকল ব্যাংকে রেমিট্যান্স নিয়ে আসার নির্দেশনা থাকলেও ১২টি ব্যাংক অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রেমিট্যান্স আনছে। ফল ব্যাংকগুলোর ফরেক্স রিজার্ভ বাড়ানোর জন্যই নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স আনছে। সভায় এই ধরণের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে সকল ব্যাংক অতিরিক্তি দরে ডলার নিয়েছে সে সকল ব্যাংকে অডিট করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এছাড়া ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্ব পাস করতে হবে। দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মই থাকবে। এছাড়া ব্যাংকার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য একটি আধুনিক সম্মিলিত ব্যাংকার্স হাসপাতাল প্রতিষ্ঠারও দাবি জানানো হয়েছিল। জানা যায়, ব্যাংকগুলোর জেনারেশনের ভিত্তিতে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //