মার্কিন প্রতিনিধিদলের আলোচিত সফরে যা যা হল

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে একসাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির পরই বাংলাদেশে তিন দিনের সফরে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের তিনজন কর্মকর্তা। এই সফরে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রী, অন্যতম বিরোধীদল বিএনপি, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে তারা সাক্ষাৎ করেছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও প্রতিনিধিদলের এটাই প্রথম সফর। ফলে এই সফরের তাৎপর্য কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাতই জানুয়ারির নির্বাচন ‘ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

প্রতিনিধিদলের সদস্যদের ঢাকায় বিভিন্ন জনের সাথে দেখা করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “তারা তাদের সঙ্গে দেখা করেছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। হয়তো তারা দেখা করতে চেয়েছে তাই তারা দেখা করেছে।”

তবে এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সাথে কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি বিএনপি নেতারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ২৪ ফেব্রুয়ারি এক বার্তায় এই প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে তিন দিনের সফর করবেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে রয়েছেন- মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লাউবাচার, ইউএসএআইডির এশিয়া বিষয়ক সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার।

এই বার্তায় তাদের সফরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধেও জানানো হয়েছে।এতে বলা হয়েছিল, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলোচনা করা হবে, ঝুঁকি চিহ্নিত করা এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক স্বার্থের অগ্রগতির জন্য একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নে আলোচনা করা হবে। এই সফরে তারা যুব সমাজ, বিশিষ্ট ব্যক্তি, শ্রমিক সংগঠন এবং মুক্ত ও সেন্সরবিহীন গণমাধ্যমের বিকাশে যারা জড়িত তাদের সাথে দেখা করবেন বলেও জানানো হয়।

আরও বলা হয়, মানবাধিকারকে সমর্থন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, আন্তর্জাতিক হুমকির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতাকে এগিয়ে নিতে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে একত্রে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই তিনদিনে প্রতিনিধিদলের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রী, অন্যতম বিরোধীদল বিএনপি, বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ হয়।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ওই প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরুর কথা জানান।

ওই আলোচনায় র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা, মিয়ানমারে যুদ্ধ, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়, গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঢাকার মিন্টো রোডে তার সরকারি বাসভবনে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন। এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা তাদের সাথে দেখা করেছে সেগুলো নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতে চাই না। ভবিষ্যতে হয়তো দেখতে পাবেন সব ঘরানার মানুষের সাথে তারা বসবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন সম্পর্কের উন্নয়নে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতারসহ প্রতিনিধিদল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সাথে বৈঠক করেন।

ঢাকার গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের আলোচনার বিষয় নিয়ে কিছু জানাননি বিএনপি নেতারা।

কয়েকটি গণমাধ্যসের প্রতিনিধিরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চান। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তখন বলেন, “একটাই উত্তর হবে, কিছুই বলার নেই।

একই দিনে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধিদল। এদের মধ্যে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসীন, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানসহ অনেকেই ছিলেন।

এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানতে যোগাযোগ করা হয় বৈঠকে যোগ দেওয়া অনেকের সঙ্গেই। কিন্তু এই বিষয়ে কেউই কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

তবে, মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পাতায় বৈঠকের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, সুস্থ গণতন্ত্র এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয় এবং বাংলাদেশ সরকারকেও তা করার আহ্বান জানানো হয়।

ওই একই দিনে শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের তিন সদস্যের এই প্রতিনিধি দল। কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার বিবিসি বাংলাকে জানান, শ্রম আইনের সংস্কার, গাজীপুরের শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম হত্যা মামলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও ইউএস ব্রান্ড যারা আছে তারা কীভাবে ব্যবসা করতে পারে এ বিষয়েও কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি পাঠান। এতে তিনি বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সমর্থনের কথা জানান। একই সাথে একটি অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন স্বপ্ন পূরণে অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে চিঠির জবাব দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চিঠির একটি অনুলিপি মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক আইলিন লাউবাচার-এর কাছে হস্তান্তর করেছেন।

আর চিঠির মূল কপি হোয়াইট হাউসের কাছে হস্তান্তর করবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার ঢাকা সফর করেন। নির্বাচনের আগে সেটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার শেষ বাংলাদেশ সফর। বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //