ড. ইউনূসকে নিয়ে সিনেটরদের চিঠি দুর্ভাগ্যজনক: অ্যাটর্নি জেনারেল

নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১২ সদস্যের চিঠিতে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে ওই চিঠির বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, কোনো দেশের বিচার প্রক্রিয়া না জেনে কোনো ধরনের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া দেওয়া সঠিক নয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া সমুচিত নয়। তিনি বিচার বিভাগের কেউ নন। প্রকাশ্য আদালতে ড. ইউনূসের মামলার বিচার হয়েছে। এটা নিয়ে কারও কোনো বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া থাকলে বাতিল করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে তারা তাদের বক্তব্য দিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, বহির্বিশ্বের যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা এ বিষয়ে কথা বলছেন, তারা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে কিছু জানেন না অথবা কেউ তাদের প্রভাবিত করে এসব করাচ্ছে।

এর আগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ওই চিঠি দেন মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১২ সদস্যের। তারা হলেন- মেজরিটি হুইপ ও সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ার ডিক ডারবিন, টড ইয়ং, টিম কাইন, ড্যান সুলিভান, জেফরে এ মার্কলে, জিন শাহিন, এডওয়ার্ড মার্কি, শেরোড ব্রাউন, পিটার ওয়েলশ, শেলডন হোয়াইটহাউস, রন ওয়াইডেন ও কোরি এ বুকার। এ প্রসঙ্গে গত সোমবার সিনেটর ডিক ডারবিন একটি টুইট করেন। ওই চিঠির ওপর তারিখ লিখা আছে ২২ জানুয়ারি। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধারাবাহিক হয়রানি এবং আরও বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে যেভাবে আইন ও বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার করা হচ্ছে, তা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আমরা আপনার কাছে লিখছি। 

এক দশকের বেশি সময় ধরে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে দেড় শতাধিক ভিত্তিহীন মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়ায় অনিয়মের উল্লেখ করেছে। এগুলোর মধ্যে সম্প্রতি দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায়ের মামলাও রয়েছে। খ্যাতিনামা এই সংস্থাগুলো বলেছে, বিচারপ্রক্রিয়ার গতি এবং বারবার ফৌজদারি কার্যধারার ব্যবহার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচারব্যবস্থার অপব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। মুহাম্মদ ইউনূসকে বারবার ও দীর্ঘ সময় ধরে হয়রানি বাংলাদেশে ক্রমে নিয়ন্ত্রণ বাড়তে থাকা পরিবেশে সুশীল সমাজের অনেক সদস্যকে যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা তুলে ধরে।

ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ড. ইউনূসের অগ্রণী ভূমিকা অনেক বাংলাদেশিসহ বিশ্বের লাখ লাখ দরিদ্র মানুষের জন্য বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সুযোগ করে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার অগ্রণী অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস তাকে কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল দেয়। চলমান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের প্রচেষ্টাকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে, যার মধ্যে আছে অভিন্ন স্বার্থে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা। অধ্যাপক ইউনূসকে হয়রানির অবসান এবং অন্যদের সরকারের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে বাক্‌স্বাধীনতা চর্চা করার সুযোগ এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //