ডেঙ্গু নিয়ে সামনে ‘শঙ্কা’ আরও বাড়ছে

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে সামনের বছরগুলোতে রোগটি আরও ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

আজ শনিবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকার নিপসম মিলনায়তনে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ পেয়েছে।

ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা ঢাকার বাইরে পাওয়া যাচ্ছে, এতে সামনে এই রোগটি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার চেয়ে বাইরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা কয়েকগুণ।

বৈঠকে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, গ্রাম পর্যায়ে কী হবে-এটা চিন্তার বিষয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক সচেতনতামূলক কাজ করা হয়েছে। এডিস ইজিপ্টি নিয়ে অনেক আলোচনা থাকলেও এডিস অ্যালবোপিকটাস নিয়ে কেউ ভাবছেই না।

তিনি বলেন, অথচ ধানগাছ, কলাগাছের পাতা, গাছের কোটর এমনকি কচু গাছের পাতায়ও এইডিস অ্যালবোপিকটাসের লার্ভা হয়।

বাংলাদেশে এখন সারা বছরই দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুতেও রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ লাখ ৬ হাজার ৪৩৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬৭৮ জন এবং ঢাকার বাইরের প্রায় দ্বিগুণ ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৯ রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এ বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৮৩। এর আগে কখনই এত রোগী বা মৃত্যু-কোনোটাই দেখেনি বাংলাদেশ।

রোগতত্ত্ববিদ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সংখ্যা (আক্রান্ত ও মৃত্যু) কিন্তু অনেক কিছু বলে না। আগে মশা এবং আক্রান্ত রোগী শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যাও কম ছিল, এখন সারা বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষই সন্দেহজনক।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক এ পরিচালক বলেন, বেইজলাইনে যে সংখ্যাটা আসবে, সেটাও কিন্তু অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমি কথাটা আবার জোর দিয়ে বলতে চাই, আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং সতর্কবাণী হিসেবে রোগতত্ত্বের মানুষ হিসেবে এই ফোরাম বলতে চায় এটা (ডেঙ্গুর প্রকোপ) বড় আকারে আসার আশঙ্কা রয়েছে- যদি না আমরা এখনই শক্তিশালী, সমন্বিত পদক্ষেপ নিই।

করোনাভাইরাস মহামারীর সময় করা জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়েছে। এখন কোভিড আক্রান্ত, মৃত্যুর সংখ্যা নেই বললেই চলে।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মহামারীবিদদের সংগঠন সরকারকে যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা করতে তৈরি।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর জন্য আমরা একটা পরামর্শক কমিটি দেখি নাই, আমি জানি না সেইখানে আমরা অবদান রাখতে পারতাম কি না। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি- এপিওডেমিলজি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি, জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক তথ্য, তত্ত্ব, বিশ্লেষণ-যেকোনো ধরনের তথ্য দিতে আমরা তৈরি আছি।

আইসিডিডিআরবি’র গবেষক ডা. শফিউল আলম বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে এই রোগের জীবানুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।

তার মতে, মশা নিধনে লার্ভিসাইডিং ভালো কাজে আসবে। তবে দীর্ঘদিন একই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মশা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে ফেলে। ফলে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিটিআই ভালো সমাধান।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক ডা. এ এস এম আলমগীর, এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় অংশ নেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //