‘বস্তির ৮২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেছেন, দেশে বস্তি এলাকায় মোট জনগোষ্ঠীর ৮২ শতাংশ দরিদ্র, যা মোট জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের হিসাবে ৪১ শতাংশের কম নয়। যদিও সরকার বলছে, বস্তিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ১৯ শতাংশ দরিদ্র।

সোমবার (২৮ আগস্ট) সকালে এএলআরডির উদ্যোগে ‘নগর দারিদ্র্য : বস্তিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভূমিতে অধিকার এবং নাগরিক সেবায় অভিগম্যতা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ কথা বলেন।

এএলআরডির সহায়তায় এইচআরডিসির করা গবেষণার নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক আবুল বারকাত। গত বছরের মে ও জুলাই মাসে দেশের ৮টি সিটি করপোরেশন ও ৮টি পৌরসভার ৪৮০টি পরিবারের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বস্তিবাসীকে অন্য ব্যয় সংকুলান করতে খাদ্য ব্যয় এবং শিক্ষা ব্যয় কমাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ অন্য বহু দারিদ্র্য বাড়ছে। নগর দরিদ্রদের ব্যাংক ঋণ নেই। অন্যদিকে নগর দরিদ্রদের আমরা অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলে আসছি। গ্রাম থেকে যে অভিবাসন হচ্ছে তা নয়। গ্রাম থেকে ‘গলাধাক্কা অভিবাসন’ হচ্ছে। ৪৫ লাখ মানুষ এ অভিবাসনের শিকার।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বারকাত বলেন, সরকারি হিসেবে ১৯৯১ সালে বস্তি ও স্বল্প আয় অথবা নিম্ন-আয় এলাকার বাসিন্দাদের ৪৯ শতাংশ ছিল দরিদ্র, যা ২০১৬ সালে নেমে দাঁড়িয়েছিল ৩৮ শতাংশে। অর্থাৎ, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বস্তিতে বাস করা একটি বড় অংশের মানুষ আসলে দরিদ্র নন। বস্তিতে দারিদ্র্যের হার দিন দিন কমছে—এমন বক্তব্য বিশ্বাস করা কঠিন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, যে পদ্ধতিতে দারিদ্র্য মাপা হয়, সেই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দারিদ্র্য কমছে দেখাতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে।

ড. আবুল বারকাত বলেন, বস্তিতে থাকা মানুষের মাসিক আয় ১২ হাজার ৭৫০ টাকার বেশি নয়। যদিও তাদের আয় নিয়ে সরকার অন্য কথা বলছেন। এসব বস্তিতে বসবাসকারী অধিকাংশই ভূমিহীন। কারও কারও গ্রামে সামান্য পরিমাণ আছে। এ ছাড়া বস্তুর মালিকদের বস্তিবাসী হিসেবে দেখিয়ে তাদের আয় দেখানো হয়।

জরিপের ফল অনুযায়ী, নগরের বস্তিবাসীর ৯৪ শতাংশ ভূমিহীন। এই পরিবারগুলোর গড় বার্ষিক আয় বছরে দেড় লাখ টাকার বেশি। ৬৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা গ্রামে থাকা স্বজনদের জন্য টাকা পাঠান। বস্তিবাসীর ৮২ শতাংশ খাদ্য অনিরাপত্তায় থাকেন।

গবেষণায় বলা হয়, বস্তির ঘরগুলোতে খুবই অমানবিকভাবে বাস করেন মানুষ। ছোট একটি ঘরে পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে থাকতে হয়। মাত্র ১৬ শতাংশের নিরাপদ স্যানিটেশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের জন্য তারা আয়ের তুলনায় যে মূল্য পরিশোধ করেন, তারা শহরের ধনীদের তুলনায় বেশি। তাঁরা এখানে বৈষম্যের শিকার।

বস্তির পরিবারের সদস্যের ৪১ শতাংশ কখনো স্কুলে যায়নি। অসুস্থতার জন্য ৬৪ শতাংশ স্থানীয় ফার্মেসিতে যায়। বস্তিবাসীর ৯৫ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিং করে থাকেন। মাত্র ৫ শতাংশের প্রচলিত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা প্রোগ্রামের সুবিধা পেয়েছেন ১২ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ বয়স্ক ভাতা পেয়েছেন গত বছর।

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, বস্তিবাসীরা আমাদের দেশের জন্য বোঝা নয়, বরং যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে পাচার করেছে তারাই বোঝা। বস্তিবাসীদের প্রতি অন্যায় ও বৈষম্য না করে তাদের সমান সুযোগ দিলে তারাও দেশের সম্পদ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে অ্যাড. সুলতানা কামাল বলেন, সরকার সুশাসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যান্য বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করছে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব মনীষা চক্রবর্তী প্রমুখ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //