ঋণখেলাপিদের জন্য আসছে বিদেশভ্রমণসহ নানা নিষেধাজ্ঞা

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ যাওয়া, বাড়ি-গাড়ি ও কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ তাঁদের রাজনৈতিক দলের কমিটিতে না রাখার বিধান রেখে ব্যাংক কম্পানি আইন, ১৯৯১ অধিকতর সংশোধন করতে একটি বিলে সংশোধনী আনা হয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুন) ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩ সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এই বিলে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি ব্যাংক পরিচালক হওয়া যাবে না এ রকম বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালক বা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনিয়মে আর্থিক ক্ষতিপূরণে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। 

উপস্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত করা ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি পৃথক কমিটি গঠন করবে।

এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। ৩২ বছরে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন হয়েছে সাতবার। এর মধ্যে ব্যাংক মালিকদের চাপে এক পরিবার থেকে চারজন এবং টানা ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকার সুযোগ দিয়ে সর্বশেষ আইন সংশোধন করা হয় ২০১৮ সালে।

এর আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনে আপত্তি জানালেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

বিলের ওপর আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত মেনে এই সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছে। সংসদে কোনো কিছু গোপন করা উচিত নয়। 

তবে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কারো পরামর্শে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে না। আধুনিক ও সময়োপযোগী ব্যাংকিংব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সময়ে সময়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এ ছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের পর্ষদে প্রাকৃতিক ব্যক্তিসত্তা বিশিষ্ট ব্যক্তি শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কোনো ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কিছু বলা নেই। কিন্তু একজন পরিচালক অন্য কোনো কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না বলে বিলে বলা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে বিকল্প পরিচালক নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তাঁর মেয়াদকাল এবং বিকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। নতুন আইনে এসব বিষয় সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তাঁর অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। পরিচালক নিয়োগের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক কম্পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে এর পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে। নতুন আইনে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কম্পানিগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পাবে। নতুন আইনের আওতায় সাবসিডিয়ারি কম্পানির পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //