আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না: প্রধানমন্ত্রী

মার্কিন ভিসা ও স্যাংশন নিয়ে মাথাব্যথা নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকা না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না।

আজ শনিবার (৩ জুন) বিকেলে রাজধানী তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। 

এর আগে, বিকেল ৪টার কিছুক্ষণ আগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এসময় রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে কার্যালয় উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা বাংলাদেশের মানুষকে যাতে স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য আমাদের যে মাটি তা ব্যবহার করে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে, সেভাবে উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা নিজের পায়ে চলবো। নিজের দেশকে আমরা গড়ে তুলবো। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে না।

তিনি বলেন, কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে; ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর, মহাদেশ আছে। সেই মহাদেশের সঙ্গে আমরা যাতায়াত করবো, বন্ধুত্ব করবো। আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত, উন্নত, চাঙা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভোট যারা চুরি করে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলেছে; আমি বলবো যে, ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দেন। সন্ত্রাসী দল হিসেবে কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে ঘোষণা দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতির দায়ে কিন্তু আমেরিকা তারেক জিয়াকে তাদের দেশে ভিসা দেয়নি। তারাই এখন তাদের কাছে ধর্না দেয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি মানুষকে চিনি, বাংলাদেশকে চিনি, নদী-নালা খাল-বিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল, কল্যাণ কোথায়- সেটা আমরা খুব ভালো করে জানি। সেটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে দেশকে উন্নয়নশীল দেশ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে। ২১০০ সালের ডেল্টা প্লানও আমরা করে দিছি। যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভালো করে চলে।’

বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা অবাধ নির্বাচন শিখলো কীভাবে? তারা তো ভোট চুরি করা শিখেছে। তারা নিজেরা চোর তাই সবাইকে চোর সন্দেহে দেখে। জনগণের সম্পদ চুরি করে বিশাল সম্পদের মালিক তারা। জিয়ার মৃত্যুর পর ৪০ দিন পর্যন্ত দেখানো হলো অত্যন্ত সৎ ছিলো জিয়া, কিছু রেখে যায়নি। ছেড়া গেঞ্জি আর সুটকেস ছাড়া। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে যাদুর বাক্স হয়ে গেলো! কোকো লঞ্চ ১, ২...সম্পদের পাহাড় গড়লো। তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে তারা কী দিয়েছে?

বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মানিলন্ডারিংয়ের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করেছে। ৪০ কোটি টাকা উদ্ধার করে আমরা আনতে পেরেছি। আর এখন দেশের বাইরে বসে চোরা টাকা আর জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী মিলে আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়, ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, সত্যের জয় হবেই।

বিএনপির সন্ত্রাস আর দুর্নীতির কারণে ২০০৮ সালে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর বিএনপি পেয়েছিলো মাত্র ২৯টি। তখন জনগণ কিন্তু তাদের ভোট দেয়নি।

বিএনপির শাসনামলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর জঙ্গিবাদের উত্থানের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৮৬ সাল পর্যন্ত সারারাত কারিফউ থাকতো। অনেকে বলে দেশে জিয়া গণতন্ত্র দিয়েছে। হ্যাঁ দিয়েছে, কারফিউ গণতন্ত্র। আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলোর আন্দোলনের ফলেই দেশে গণতন্ত্র এসেছে।

তিনি বলেন, ৯৬ সালে অনেকগুলো অর্জন এনে দিয়েছিলাম। ২০০১-এ ষড়যন্ত্র করে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। ফল পরিবর্তন করে আমাদের হারানো হলো। আর গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন; ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩টিতে বোমা হামলা, বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদে দেশ ভরে গেলো। এগুলোর প্রতিবাদ করায় আওয়ামী লীগের একেকজন নেতার বিরুদ্ধে শত শত মামলা, আমার বিরুদ্ধেও ১২টি মামলা দিলো। প্রচণ্ড অত্যাচার করেছে, এরপরও আওয়ামী লীগকে দমাতে পারেনি। এদেশের ভোট কারচুপি জিয়ার আমল থেকে শুরু। ’৯৬ এর ১ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে ১৫ দিনও থাকতে পারেনি।

পাকিস্তান আমল থেকে খালেদা জিয়া, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলের, এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য গড়ে উঠিছে আওয়ামী লীগ। কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই মানুষের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে পরিকল্পনা নেয়, মাটি-মানুষ–পরিবেশ-প্রাকৃতিক অবস্থা এগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প হাতে নিই। এজন্য মানুষ এর সুফল পায়।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //