মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাসে ৩শ’ কোটি টাকার হুন্ডি: সিআইডি

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে হুন্ডির মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

আজ মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া।

এর আগে গতকাল সোমবার (২১ নভেম্বর) রাতে কুমিল্লা ও ঢাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে এমন একটি চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। চক্রটি এমএফএস ব্যবহার করে চার মাসে তিন কোটি টাকা পাচার করেছে বলে দাবি সিআইডি। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো—মীর মো. কামরুল হাসান শিশির, খোরশেদ আলম, মো. ইব্রাহিম খলিল, কাজী শাহ নেওয়াজ, মো. আজিজুল হক তালুকদার ও মো. নিজাম উদ্দিন।

সিআইডিপ্রধান বলেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডিচক্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে ওই বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ মূল্যে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এ কাজে অপরাধীরা ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি করে থাকে।

তিনি জানান, প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারি ও তার সহযোগীরা দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএসের এজেন্টকে দেয়। তৃতীয় গ্রুপ তথা এমএফএসের এজেন্ট কর্তৃক বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএসের নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে।

চক্র দুটি প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। গত এপ্রিল মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি চক্র প্রায় ৩ কোটি টাকা হুন্ডি করেছে।

সিআইডিপ্রধান আরো বলেন, মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের মালিকানাধীন কুমিল্লার লাকসামে অবস্থিত বিকাশ ডিস্ট্রিবিউশন হাউস জে এ এন্টারপ্রাইজের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিআইডি সন্দেহজনক দুটি এজেন্ট সিম নিয়ে কাজ করে, যার মাধ্যমে গত ৬ মাসে ৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায়।

তিনি জানান, এ দুটি সিম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এ রকম আরো ১১টি এজেন্ট সিমের সন্ধান পায় সিআইডি, যাদের মাধ্যমে এ রকম সন্দেহজনক তথা ডিজিটাল হুন্ডির তথ্য রয়েছে। ২ হাজার এজেন্ট সিমের বেশ কিছু এজেন্ট সদস্য হুন্ডির মতো অবৈধ কাজে সরাসরি জড়িত।

ডিজিটাল হুন্ডির কাজকে সহজ নির্ভুল এবং দ্রুততম উপায়ে সম্পন্ন করার জন্য তারা বেশ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ‘ফ্রিডমফ্লেক্সি২৪ডটকম’ এমন একটি সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী হুন্ডি কারবারিরা বাংলাদেশে যে নম্বরগুলোতে টাকা পাঠানো হবে সেই নম্বরগুলো ইনপুট দিত এবং বাংলাদেশে থাকা বিভিন্ন এমএফএস এজেন্টদের সহায়তায় বাংলাদেশি হুন্ডির এজেন্টদের মাধ্যমে টাকাগুলো সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন হয়ে প্রাপকের কাছে যেত।

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, এমএফএসের এজেন্টদের সহযোগিতায় চক্রের সদস্যরা বিদেশে স্থানীয় সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচা, মাদক কেনা-বেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল, ১৮টি সিমকার্ড, একটি ল্যাপটপ ও একটি ট্যাব উদ্ধার করা হয়েছে। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিআইডির প্রধান বলেন, সব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আওতায় অনেক ডিস্ট্রিবিউশন হাউস আছে। এই ডিস্টিবিউশন হাউসের মালিক ও কর্মচারী তাদের উচিত অধীনস্ত যেসব এজেন্টগুলো আছে এই এজেন্টদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা। যদি মনিটরিং না করে তাহলে তারা আইনের আওতায় আসবে।

তিনি আরো বলেন, বিকাশ, রকেট ও নগদের কর্তৃপক্ষ যারা ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অনুমোদন দিয়েছে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন হাউস অবশ্যই মনিটরিং করবে। তারা যদি তা না করে তাহলে আমরা বাধ্য হবো তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য। প্রবাসীরা যেন তাদের ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠায়। সেক্ষেত্রে দেশের উন্নতি হবে ও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //