উপকূলে চলছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডব

ভারি বর্ষণ আর কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সঙ্গী করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর উপকূল স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ বা কেন্দ্র আজ মধ্যরাতে বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূল অতিক্রম করবে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে ইতিমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা এবং ওই এলাকার দ্বীপ ও চরগুলোকেও ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজার উপকূল এবং সেখানকার চর ও দ্বীপগুলোকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সানাউল হক মণ্ডল জানান, ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার ব্যাসের এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সোমবার সন্ধ্যার পর বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে।

সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে ভোলার পাশ দিয়ে এ ঘূর্ণিঝড় পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসবে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিমি. দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালীসহ উপকলীয় জেলাগুলোতে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি চলছে বলে আমাদের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন। অনেক এলাকায় ঝড়ে গাছ ভেঙৈ পড়ার এবং বিদ্যুৎ বন্ধ থাকারও খবর আসছে।

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস বলছে, বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের চোখ বা কেন্দ্রভাগ পটুয়াখালীর রাঙাবালি বা চর মন্তাজ এলাকায় উপকূল স্পর্শ করবে। তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ৫০ নট বা ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটারের মত।   

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সারাদেশে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরও বন্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর ৭ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে ২৫ লাখ মানুষ ঠাঁই নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

সিত্রাংয়ের যে বিস্তার, তাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলায় এ ঝড় তাণ্ডব চালাতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

এই জেলাগুলো হল– বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চল মহেশখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বেশি পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //