খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যোৎপাদন প্রতিনিয়ত কমছে। এ কারণে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে আগামী বছর খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। সেই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে।

বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে এফএওয়ের প্রকাশিত নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত সেপ্টেম্বরে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সামনের বছরে বিশ্বের ৪৫টি দেশ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। এর মধ্যে এশিয়া মহাদেশভুক্ত দেশ আছে নয়টি, বাংলাদেশসহ যার তিনটিই আবার দক্ষিণ এশিয়ার।

জলবায়ু পরিবর্তন ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে চাপে পড়েছে বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা। জ্বালানি সংকট ও আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারের অস্থিরতায় ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে পরিস্থিতি। বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটেছে সার ও কৃষিপণ্যের সরবরাহ চেইনেও। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় অভ্যন্তরীণ নানা প্রভাবক এ সংকটকে স্থানীয় পর্যায়ে আরো মারাত্মক করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আসন্ন দিনগুলোয় খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় নীতিনির্ধারকরাও এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে উল্লেখ করে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্যোৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন। এজন্য দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে সে বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন তিনি।

এফএওসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার প্রক্ষেপণে গোটা বিশ্বেই চলতি বছর খাদ্যশস্য উৎপাদন কমার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এফএওর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের আর সব মহাদেশ বা অঞ্চলেই এবার খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবেশি হারে কমবে।

জ্বালানি সংকট এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কৃষি উৎপাদন খাতে আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দামও এখন বাড়তির দিকে। মূল্যস্ফীতির কারণে অন্য খাতগুলোর মতো কৃষি উৎপাদনেও কৃষকের খরচ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিষয়গুলো এরই মধ্যে দেশে দেশে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটও (আইএফপিআরআই) মনে করছে, করোনা মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে। 

সংস্থাটির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দামে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। একইসাথে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এ ভারসাম্যহীনতায় আরো প্রভাব ফেলেছে। এতে উন্নয়নশীল দেশ ও তাদের উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্যের হারে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে। বাংলাদেশেও খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্যের সমতা নষ্টের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গ্রামীণ খানাগুলোয় খাদ্যের পেছনে ব্যয় কমিয়ে পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এ মুহূর্তে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকির আজমল হুদা বলেন, বোরো মৌসুমের জন্য আমাদের হাতে আরো তিন মাস সময় আছে। এ সময়ে সারের মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টির সংকট হলেই কিন্তু সেটাকে খাদ্যনিরাপত্তার সংকট হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে পুষ্টির ক্ষেত্রেও নজর দিতে হবে।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে আমরা সে ধরনের ঝুঁকির মধ্যে যাব না। তবে কৃষি সবসময়ই ঝুঁকিতে থাকে। বিষয়টি আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। সিডরের মতো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তখন আমার ধারণাও ঠিক থাকবে না। আমাদের দেশে বছরে ৬০-৭০ লাখ টন গম লাগে। ১০ লাখ টনের মতো আমরা উৎপাদন করতে পারি। বাকিটা আমদানি করতে হয়। গমের সংকট বিশ্বব্যাপী। এখানেই বড় শঙ্কা। আমরা যদি ৫০ লাখ টন গম আমদানি করতে না পারি, তাহলে চালের ওপর চাপ পড়বে। তবে চালের ক্ষেত্রে সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে। চাল অনেক দেশ থেকেই আমদানি করার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। বড় দুর্যোগ না হলে বিশ্বের যেখানেই খরা হোক, যুদ্ধ হোক; বাংলাদেশের মাটিতে ফসল হবে। সুতরাং খাদ্য সংকটের শঙ্কা নেই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //