বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫১তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ

মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫১তম শাহাদাত বার্ষিকী আজ সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর)। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। এদিন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ এবং দলীয় সঙ্গীদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন নূর মোহাম্মদ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুরে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

এদিকে, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এবারই প্রথম নড়াইল জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার (নূর মোহাম্মদ) জীবনভিত্তিক আলোচনা এবং আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে শুধু নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মভূমিতে জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালিত হতো।

পারিবারসহ তার জীবনাদর্শ থেকে জানা যায়, নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা, মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে অনেকে একমত নন। 

উল্লেখ্য, মহিষখোলার নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ নূর মোহাম্মদ নগর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী নূর মোহাম্মদ নগরের উদ্বোধন করেন।  

এরপর উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যায় নূর মোহাম্মদ নগর। তার স্মৃতি রক্ষার্থে নূর মোহাম্মদ নগরে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’, স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্কুল ও কলেজ। এছাড়া নড়াইল শহরে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়াম এবং নড়াইল ও যশোর শহরে সন্তানদের জন্য বাড়ি।

নূর মোহাম্মদের কর্মময় জীবন থেকে জানা যায়, ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন তিনি। বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (বিজিবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই বাহিনীতে দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করার পরে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন তিনি। পরবর্তীতে ল্যান্স নায়েকে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এস এ মঞ্জুর। নূর মোহাম্মদ যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করেন।

এদিকে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা (৮০) বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। নূর মোহাম্মদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে নড়াইল এবং যশোর শহরে বসবাস করেন।

অপরদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫১তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় নূর মোহাম্মদ নগরে কোরআনখানি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, পুলিশ কর্তৃক সশস্ত্র সালাম, দোয়া মাহফিল, শিক্ষার্থীদের কুইজ প্রতিযোগিতা এবং প্রায় ৩০০ অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া নূর মোহাম্মদের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে এবারই প্রথম নড়াইল জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জীবনভিত্তিক আলোচনা এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে শুধু নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মভূমিতে জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো।

এদিকে, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও কলেজটি জাতীয়করণসহ তার বাড়িতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের চারিদিকে সীমানা প্রাচীর ছাড়াও দর্শনার্থীদের বসার জায়গা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //