বিমান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ যাত্রীর অভিযোগ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আয়োজিত গণশুনানিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে নিয়েই অভিযোগ জানিয়েছেন বেশিরভাগ যাত্রী।

আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে বিমানবন্দরের বহির্গমন কনকোর্স মিলনায়তনে এই কর্মসূচিতে ছিলেন বিভিন্ন এয়ারলাইন ও সংস্থার প্রতিনিধিরা। তবে বিমান বাংলাদেশের কোনও প্রতিনিধি হাজির না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। 

যাত্রী হয়রানি বন্ধে বিমান বাংলাদেশকে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। যাত্রীসেবার মান উন্নত করতে গণশুনানিতে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে বেবিচক।

গণশুনানিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নিয়ে যাত্রীরা বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে রয়েছে– বিমানের ফ্লাইট শিডিউল ঠিক না থাকা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফ্লাইট পরিবর্তনের তথ্য যাত্রীদের না জানানো ইত্যাদি।

গণশুনানিতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে আসা প্রবাসী মোহাম্মদ রিয়াদ সরকার বলেন, ‘বিমানের কাউন্টারে আমাদের যেন ভিক্ষুকের মতো মনে করা হয়। আমরা কোনও সহযোগিতাই পাই না। আজ বিকাল ৩টায় বিমানের ফ্লাইটে সৌদি আরব যাওয়ার কথা। কিন্তু ফ্লাইটটি কখন যাবে কিছুই জানাচ্ছে না কেউ। একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সেবা আন্তর্জাতিক নয় কেন?’

এমন অভিযোগে দুঃখ প্রকাশ করেন বেবিচক চেয়ারম্যান। তখন গণশুনানিতে বিমানের প্রতিনিধি কেউ আছেন কিনা জানতে চান তিনি। তবে বিমানের পক্ষ থেকে কেউ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। তিনি বিমানের প্রতিনিধিকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গণশুনানিতে উপস্থিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

রিয়াদ সরকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনার (রিয়াদ) সঙ্গে এমন ঘটনার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। দুঃখ লাগছে আপনি সকালে এসেছেন, অথচ বিলম্বের বিষয়টি এয়ারলাইনস (বিমান) আপনাকে জানায়নি। এটা বিমান ঠিক করেনি। এজন্য এয়ারলাইনসকে আমরা ধরবো।’

বেবিচক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘বিমানবন্দরে কেউ সেবা পেতে ব্যাহত হলে হেল্প ডেস্ক আছে, ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। অভিযোগ এলে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হয়। যারা সেবা দিতে ব্যর্থ হয়, তাদের জরিমানা করা হয়। আমরা যাত্রীসেবা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

মিনিট দশেক পর গণশুনানিতে উপস্থিত হন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের স্টেশন ম্যানেজার আরিফুজ্জামান খান। তিনি রিয়াদ সরকারের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তার বিষয়টি শুনে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

গণশুনানিতে কুমিল্লা থেকে আসা প্রবাসী মো. তৌহিদুল ইসলামও বিমান বাংলাদেশের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ করেন। এছাড়া ভাড়া প্রসঙ্গে এই যাত্রী বলেন, ‘আবুধাবি থেকে আমি ৫০ হাজার টাকায় যাওয়া-আসার রিটার্ন টিকিট কিনতে পেরেছি। কিন্তু বিমানে আবুধাবিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টিকিটের ক্ষেত্রে কেবল ওয়ান-ওয়ে ৮০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা গুনতে হয়। এটা কেন?’

এ প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘টিকিটের মূল্য এয়ারলাইনসের বিষয়। তাদের সঙ্গে বসে সরকারের পক্ষ থেকে টিকিটের দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মূলত বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় উড়োজাহাজের সংখ্যা কম। এ কারণে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর টিকিটের দাম বেশি। বিমান ইতোমধ্যে ভাড়া কমিয়েছে, আসনের ধারণক্ষমতাও বাড়িয়েছে।’

আরেক প্রবাসী গোলাম মোস্তফার মন্তব্য, ‘বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট সবসময় দেরি হয়। কখনও ঠিক সময়ে ছাড়ে না। এটা কেন?’

জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিমানের ফ্লাইট কেন বিলম্ব হয় তাদের কাছে জানতে চাইবো। কেন হচ্ছে সেই ব্যাপারে আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাখ্যা চাইবো।’

গণশুনানিতে অংশ নেন জর্জিয়ার নাগরিক কার্ল অগাস্টন। তিনি বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করেন। তবে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরের সিম না থাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে ওয়াইফাই সুবিধা ব্যবহার করতে না পারার বিষয়ে অভিযোগ জানান এই বিদেশি।

এ প্রসঙ্গে এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান উল্লেখ করেন, বিমানবন্দরের আগমনী টার্মিনালে সব যাত্রীর জন্য ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও বহির্গমন টার্মিনালে সেটা নেই। তবে বহির্গমন টার্মিনালেও ওয়াইফাই সুবিধা দ্রুত যুক্ত করার আশ্বাস দেন তিনি।

গণশুনানিতে আরো ছিলেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদায়ী নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান, নবনিযুক্ত নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম খান, এওসি চেয়ারম্যান দিলারা আহমেদ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //