শিশুদের কাজের বয়স সর্বনিম্ন ১৪ বছর

বিশেষ বিবেচনায় শিশুদের কাজের বয়স শিথিল করে সর্বনিম্ন ১৪ বছর নির্ধারণ করা আইএলও কনভেনশন-১৩৮ অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা ৷ সনদে শিশুশ্রমের চাইতে প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

আইএলও সনদে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুকে কাজে নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে কোনও দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বয়সসীমা ১৪ বছর হতে পারে।

গতকাল সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘আইএলও কনভেনশন-১৩৮’ অনুসমর্থনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ওই সনদে শিশুশ্রমের ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত শর্তগুলো তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে।

তিনি বলেন, ‘এখানে তিনটা জিনিস আছে। একটা হলো জেনারেল ভিউটা হলো, যেহেতু বেসিক এডুকেশন করতে ১৫ বছর লাগে সুতরাং ১৫ বছরের কম কোনও বাচ্চাকে কাজে লাগানো যাবে না। দুই নম্বরে আরেকটু রিল্যাক্স করেছে, তবে কোনও দেশের যদি আর্থ সামাজিক অবস্থা বিশেষ বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা কমাতে চায় তাহলে ১৪ বছর পর্যন্ত কমানো যাবে, এর উপর না। তিন নম্বরে বলেছে, এই যে ১৪ হোক বা ১৫ই হোক এই শিশুদের কোনো অবস্থাতেই কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইএলও কনভেনশন-১৩৮’ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৩টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে।

সনদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচিব বলেন, যেসব কাজে তাদের এক্সিডেন্ট হওয়ার বা জীবন নাশের সম্ভাবনা আছে সেই সব কাজে কোনোভাবেই এই সব শিশুদেরকে ব্যবহার করা যাবে না। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিশুদের কাজে যোগ দেওয়ার বয়সসীমা শিথিল করে নির্ধারণ করা হলেও সনদে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এই যে ১৪ বছর বয়সে তাদের কাজে লাগানো হলো, এই রেফারেন্সটা, সে যে সাবালক হয়েছে, সেই হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। এটা তার বিয়ের বয়স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমায় সে সাবালক হিসেবে বিবেচিত হবে না। মামলা মোকাদ্দমায় যদি সে পড়ে তাহলে তাকে শিশু অপরাধী হিসেবেই গণ্য করতে হবে।

সনদে বলা হয়, মূলত শিশু শ্রমের চাইতে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং ন্যূনতম শিক্ষা সম্পন্ন করার পূর্বে যেন কোনও শিশু শ্রমে প্রবেশ না করে, তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

১৪ বা ১৫ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুকে চাকরি দিলে কী শাস্তি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে।

ন্যূনতম বয়স সনদ ১৯৭৩ হিসেবে পরিচিত ‘আইএলও কনভেনশন ১৩৮' এর ১ নম্বর ধারায় মূলত জাতীয় পর্যায়ে নীতি কাঠামো তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সনদে ১৮ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগে মালিক পক্ষকে শ্রমিকদের নাম ও বয়স তালিকাভুক্তির আইনি বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে (আর্টিকেল-৯) ৷ এছাড়াও আইন ভঙ্গের জন্য শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। 

ঝুঁকিপূর্ণ কাজের (আর্টিকেল-৩) ধরণ সম্পর্কে এই সনদের বক্তব্য সনদ ১৮২ এর অনুরূপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সমর্থন দিয়েছে। আর্টিকেল-৩.১ অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ১৮ বছরের নিচে কোনও শিশুকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

তবে ১৬ বছর বা তার ঊর্ধ্বে কোনও শিশুকে এ কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে দুটি শর্তে। প্রথম শর্তে বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ধরণ সম্পর্কে তাদের আগেই জানাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে (আর্টিকেল-৩.৩) ৷

এর আগে আইএলও’র সাতটি মৌলিক সনদে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ আরও সাবসিডিয়ারি ৩৫টা কনভেনশনেও স্বাক্ষর করেছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //