ডায়াবেটিসে অ্যান্টিবডি তৈরিতে পার্থক্য হয় না: বিএসএমএমইউ

করোনা টিকার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসসহ অন্য রোগের কারণে অ্যান্টিবডি তৈরিতে কোনো পার্থক্য হয় না। প্রায় সবার ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডির মাত্রা একই রকম বৃদ্ধি পায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এবং ভ্যাকসিনের ওপর পরিচালিত ‘করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর হেমাটোলোজিক্যাল মানদণ্ড এবং অ্যান্টিবডি টিট্রে পরিস্থিতি’ শীর্ষক ওই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

এতে সহ-গবেষক হিসেবে প্রকল্পটিতে যুক্ত ছিলেন বিএসএমএমইউ এর হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।

গবেষণায় ২ ডোজ টাকা নেয়ার এক মাস পর, ২ ডোজ টিকা নেয়ার ৬ মাস পর এবং বুস্টার ডোজ নেয়ার এক মাস পর শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে ২ ডোজ টিকা নেয়ার এক মাস পর এবং এদের মধ্যে ৩০ জনের ২ ডোজ টিকা নেয়ার ৬ মাস পর এবং বুস্টার ডোজ নেয়ার একমাস পর অ্যান্টিবডির মাত্রা পরিমাপ করা হয়।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত। অর্ধেকের বেশি অংশগ্রহণকারী আগে থেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। তবে এ ধরনের রোগের কারণে অ্যান্টিবডি তৈরিতে কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী টিকা নেয়ার পরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে রক্ত জমাট বাঁধা বা অন্য কোনো জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গবেষণাকালে দেখা যায়নি।

টিকা গ্রহণের পর প্রথম ধাপে ২২৩ জনের মধ্যে ৯৮ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। যারা আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের শরীরে তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। টিকা নেয়ার ৬ মাস পার হওয়ার পরে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন টিকা গ্রহীতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশের অ্যান্টিবডির মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। গড় অ্যান্টিবডির মাত্রা ৬৭৯২ এইউ/এমএল থেকে ৬৭৯২ এইউ/এমএল-এ নেমে এসেছে।

গবেষণায় দুইজন টিকা গ্রহীতার শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়নি। বুস্টার নেয়ার পর শতভাগ অংশগ্রহণকারীদের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায় এবং প্রায় সবার ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডির মাত্রা আবারো বেড়ে গড় অ্যান্টিবডির মাত্র ২০৮৭৮ এইউ/এমএল এ দাঁড়ায়। রক্তের মানদণ্ডে (হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেটসহ অন্যান্য) উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। টিকার বুস্টার ডোজ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতার প্রমাণ এ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে পাওয়া যায়।

কোভিড-১৯ অতিমারিতে বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত ৪২ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর মধ্যে প্রায় ২৯ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয় এবং পরে ফাইজার, মডার্না, সিনোভ্যাকসহ বিভিন্ন টিকা এ কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটির বেশি মানুষ টাকার প্রথম ডোজ এবং সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ এবং ৩০ লাখের বেশি মানুষ টাকার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //