জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ, বাড়বে শিশুশ্রম

বাংলাদেশের শিশু শ্রমিকরা প্রায় ৩৪৭ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে ৪২ ধরনের কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৩ ধরনের কাজকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের (বিএলএফ) তথ্য জানাচ্ছে, শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জে সাড়ে ৯ হাজার ছোট-বড় কারখানায় কাজ করা  ৪৭ শতাংশ শ্রমিকের বয়স ১৭ বছরের নিচে। পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার এবং ৫-১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় এক লাখ ২০ হাজার। ছোট ছোট গার্মেন্টস ও পোশাকসামগ্রী তৈরির প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে তারা বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের। এদের মধ্যে আবার ৯০ শতাংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সংকটে বাড়বে শিশুশ্রম- এমনটাই ধারণা করছেন গবেষকরা।

করোনা মহামারির সরাসরি প্রভাবে বাড়বে শিশুশ্রম, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে। বাড়বে দারিদ্র্যতা, শিশু শ্রমিকদের হার- এমনই নানাবিধ হুমকির মুখে বাংলাদেশ। শিশুশ্রম বন্ধে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা জেলার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন একটি সম্মেলন প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আয়োজন করেছে।

স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারী কারখানার শিশুশ্রম নিরসন, সমস্যা ও করণীয় শীর্ষক এই সম্মেলনে আসছে সময়ের চ্যালেঞ্জ ও সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী জানান, ‘বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত কেরানীগঞ্জের স্থানীয় পোশাক প্রস্তুতকারী কারখানা থেকে শিশুশ্রম নিরসন করা হবে অচিরেই। কেরানীগঞ্জ উপজেলাকে মডেল উপজেলা হিসেবে শিশুশ্রম নিরসনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। কাজ চলছে দ্রুত।’

বাংলাদেশের শিশুশ্রম নিরসনের আরও গতিশীলতা আনতে পরামর্শ দেন আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন। তিনি বলেন, ‘শিশু শ্রমিকদের রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আইন তৈরি ও কার্যকর করার মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, উপ-মহাপরিদর্শক একেএম সালাউদ্দিন, আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা বিলকিস, বিএলএফের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম খান, মহাসচিব জেড এম কামরুল আনাম, বিএলএফের নির্বাহী পরিচালক একেএম আশরাফ উদ্দিন, কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসানসহ গবেষক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নীতিনির্ধারকরা।

সম্মেলনে শিশুশ্রম নিরসনে আইনের বহুমাত্রিকতা ও নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ পোশাক চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করে থাকে স্থানীয় পোশাক তৈরির কারখানাগুলো। স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণে এ সব কারখানাগুলোর মধ্যে শীর্ষে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এবং এরপরে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের অবস্থান। এ সব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় ৩২ ভাগ শ্রমিক শিশু, যারা সর্বদা অত্যন্ত ঝুঁকির সাথে কাজ করে যাচ্ছে। শিশুদের শিশুশ্রমের হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আলোচকরা মতামত দেন। দীর্ঘমেয়াদে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে শিশুশ্রম বন্ধ করতে আহ্বান জানানো হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : শিশুশ্রম

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //