বাংলাদেশে বজ্রপাত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে

বজ্রপাত দক্ষিণ এশিয়ায় অপেক্ষাকৃত নতুন দুর্যোগ।  বাংলাদেশে বজ্রপাত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বাংলাদেশের বজ্রপাত ঋতুভিত্তিক। মধ্যরাত থেকে সকালে বজ্রপাতের পরিমান বেশি এবং মে মাসে সর্বোচ্চ বজ্রপাত হয়। অন্যদিকে বজ্রপাতের হট ও কোল্ড স্পটগুলো দিন ও রাত অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।

বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক বিন্যাস, কারণ ও বাঁচার উপায়" শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আজ শনিবার (০৬ নভেম্বর) অনলাইনে এই সেমিনারের আয়োজন করে। 

বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক বিন্যাস, কারণ ও বাঁচার উপায়" শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা  আরও জানান , জলাভূমি ও স্থায়ী জলাশয়গুলোতে দিন ও রাতে বজ্রপাতের সংখ্যা অন্যান্য ভূমির আচ্ছাদনের তুলনায় বেশি এবং  সুপ্ততাপ প্রবাহ দেশের বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক বিন্যাসকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের পরিচালনায়  সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ এন্ড প্ল্যনেটারি সায়েন্সেস এর অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান।  আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম এ্যওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

সেনিারে বলা হয় , দক্ষিণ এশিয়ায় বজ্রপাত অপেক্ষাকৃত নতুন দুর্যোগ। বলা হয় বাংলাদেশে বজ্রপাত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে, ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করে। বজ্রপাত থেকে প্রাণহানি ও ঝুঁকি হ্রাসে নিরাপত্তা পাঠের বিকল্প কম।

বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রাণহাণির ঘটনা বেড়েই চলেছে। বজ্রপাতের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিনই আসে মৃত্যুর খবর। বেশিরভাগ সময় বিচ্ছিন্নভাবে এক দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আবার কখনও কখনও একটিমাত্র বজ্রপাতে বহু মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে।

বজ্রপাতে শুধু গ্রামের মানুষই মারা যাচ্ছে এমনটি নয়। ৫ জুন ঢাকার মালিবাগে বজ্রপাতের সময় দুই শিশুসহ তিন জন নিহত হয়েছেন। বজ্রপাতে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ১১ বছরে মোট ২ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩২৯ জন মারা গেছেন। এ বছর মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাসে সারাদেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোণা ও চট্টগ্রামে বজ্রাঘাতে প্রাণহানি বেড়েছে। তবে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ।

সেমিনারে জানানো হয় , ২০২১ সালের ৪ আগস্ট  চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরযাত্রা অনুষ্ঠানে ১৬-১৭ জনের এবং ২৩ আগস্ট দিনাজপুরে ৪ বালকের একসাথে মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায় ভূমির বিদ্যুতায়ন এবং পার্শ্ব ঝলকানির দরুন তাদের মৃত্যু হয়। আমাদের দেশে বজ্রপাতের ঘটনা মৌসুম-ভিত্তিক, তাই বার্ষিক উপাত্তের ভিত্তিতে ঝুঁকি হ্রাসের পদক্ষেপ নিলে প্রাণহানির হ্রাসে কার্যকর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম। অত্যধিক জনঘনত্ব ও বজ্রপাত মৌসুমে মাঠে-ঘাটে এবং জলাশয়ে বেশি মানুষ কাজে সম্পৃক্ত থাকে বলে সাম্প্রতিককালে মৃত্যু বাড়ছে।

আবু নাসের খান তার বক্তব্যে বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করলে বজ্রপাতে মৃত্যুসহ ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সুফল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। আজকের এই  গবেষণা প্রবন্ধটি পরবর্তী  গবেষণার অন্যতম ভিত্তি হতে পারে। বক্তারা বলেন,বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতন হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। বজ্রপাত থেকে জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয় সম্পর্কে জানাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মূল গণমাধ্যমকে ও সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা কার্যক্রম নিতে হবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সুলতানা শফী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ও জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান, নেত্রকোনার বৃক্ষপ্রেমিক হামিদ কবিরাজ প্রমুখ।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //