ভারতে গ্রেফতার পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা বরখাস্ত

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে গেছেন এমন পুলিশ রিপোর্ট পাবার পর বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে।

ইতোমধ্যে তার স্থলে নতুন কর্মকর্তাকেও পদায়ন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সোহেল রানাকে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গতকালই তার স্থলে নতুন কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল। তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন, গুলশান পুলিশের পক্ষ থেকে এমন রিপোর্ট আসার পর বনানীর পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে নেপাল সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক আটক হন বনানীর ইন্সপেক্টর সোহেল রানা। এমন অবস্থার মধ্যে তার স্থলে নতুন কর্মকর্তা হিসেবে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর গাজীকে বদলি করা হয়েছে।

রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ২১ ইন্সপেক্টর (পুলিশ পরিদর্শক নিরস্ত্র) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। তাদের মধ্যে সোহেল রানাকে সরিয়ে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর গাজীকে একই পদে বনানী থানায় বদলী করা হয়। এই আদেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

গতকাল রবিবার বিকেলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, বনানী থানার ওসি তদন্ত সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পাশাপাশি যেহেতু তিনি ভারতে বিএসএফ কর্তৃক আটক রয়েছেন, সেখানেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এজন্য তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তার স্থলে নতুন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ রিপোর্টের অপেক্ষা করছি। রিপোর্ট পেলেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কথিত পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। যেহেতু ভারতে মামলা হয়েছে এ কারণে তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, সেটি নিশ্চিত না। তবে ফিরিয়ে আনার রাস্তা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিএসএফকে চিঠি দিয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এটি অনেক সময় করা হয়। আমরা চেষ্টা করছি ফিরিয়ে আনার জন্য। যদি এ মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাকে ফেরত আনার চেষ্টা করবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, তার (পরিদর্শক সোহেল রানা) ব্যাপারে গুলশান বিভাগ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে রিপোর্ট পেলে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানা নামে এক বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিএসএফ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন তিনি।

বিএসএফের হাতে আটক সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। বনানী থানার এই পুলিশ পরিদর্শকের বোন ও ভগ্নিপতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই-অরেঞ্জ’ পরিচালনা করতেন।

গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলা হয়। আসামিরা হলেন ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ এবং পুলিশের বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা।

শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। তবে অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //