ধনীদের কর বাড়িয়ে স্বাস্থ্যে বরাদ্দের সুপারিশ

আগামী অর্থবছরের (২০২২-২২) জাতীয় বাজেটে ধনীদের আয়কর বাড়িয়ে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি ও শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। একইসঙ্গে বাজেটের অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে-রি-অ্যাডজাস্টমেন্ট, রিকোভারি ও রিফর্ম।

বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব সুপারিশ তুলে ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম।

তৌফিক ইসলাম বলেন, ধনীদের আয়কর গত বছর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এটাকে আবার ৩০ শতাংশ ফিরিয়ে নেয়া উচিত। সামষ্টিক অর্থনীতি ও বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এটা সামঞ্জস্য। বিভিন্ন দেশ এখন এটা করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ধনীদের কর হার বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইন্টারনেটের সম্পূরক শুল্ক ও সোর্স ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের ব্যবহার এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা শুধু ধনীরা ব্যবহার করেন এখন আর এমনটা নেই। অনেক সাধারণ মানুষকে শিক্ষার কাজে বা অন্য কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে। যে ধরনের করকাঠামো এখানে আছে, আমরা মনে করি এটা সহায়ক অবস্থায় নেই। আমরা সুপারিশ করছি সম্পূরক শুল্ক যে ১৫ শতাংশ আছে তা প্রত্যাহার করা। সেই সঙ্গে ১ শতাংশ যে সোর্স ট্যাক্স রাখা হয়েছে তাও প্রত্যাহার করা। এখন শুধুমাত্র যে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে সেটাকে রেখে, এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

তিনি বলেন, ব্যবসার জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবার গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক মওকুফ করা উচিত। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া বন্ধ করতে হবে, যদিও এর মাধ্যমে কিছু রাজস্ব আদায় হয়।

বাজেট ঘাটতি মেটানোর ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের ওপর জোর দেয়ার দাবি জানিয়ে তৌফিক ইসলাম বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ব্যাংক খাতে বড় পরিমাণে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। আমরা অতিরিক্ত ব্যয়ের কথা বলছি, সে ক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি যদি বেশি হয়, তাহলে ব্যাংক থেকে টাকা নেয়ার ক্ষেত্রে সংকোচ না করাটাই যুক্তিযুক্ত হবে। কারণ এখন বেসরকারি খাতে চাহিদা কম।

স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, কোভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে ধরনের বাজেট বরাদ্দ দরকার তার ক্ষেত্রে সরকার যেন কোনো ধরনের কুণ্ঠাবোধ না করে। এটা নতুন ইউনিটের ক্ষেত্রে, আইসিইউ, অক্সিজেনের ক্ষেত্রে। এই মুহূর্তে সব থেকে খারাপ পারফর্ম করা একটা বিভাগ হলো স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য খাতে যে ধরনের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনর অনিয়ম, দুর্নীতি, বেশি দামে পণ্য কেনার খবরগুলো আমাদের কাছে খুবই দুঃখজনক মনে হয়েছে। আমাদের যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে, যেন ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন স্বাস্থ্য খাতকে আমাদের অগ্রাধিকার দিয়ে, যে ঝুঁকিগুলো নতুন হচ্ছে এটাকে কীভাবে সামাল দেবে, সেটা বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। এখন প্রবৃদ্ধিটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। এখন নতুনভাবে মেগা প্রকল্পে না গিয়ে, কীভাবে কর্মসংস্থান বাড়ে সেইসব প্রকল্পে মনোযোগ দিতে হবে। ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশি অর্থ আমরা যত বেশি হারে ব্যবহার করতে পারব ভালো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //