স্থবির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা হতাশাজনক

বাংলাদেশে আশ্রিত এগারো লাখ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর। চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা। কিন্তু গত তিন বছরেও শুরু হয়নি সে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। এ যাবৎ একজন রোহিঙ্গা ফেরত নেয় নি মিয়ানমার সরকার।

মিয়ানমারের সাথে এ নিয়ে অনেকদিন কথাবার্তাও বন্ধ রয়েছে। মিয়ানমারে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অন সান সুচির  দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) আবারো নির্বাচিত হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অন সান সুচি এ যাবৎ যে  নেতিবাচক ভুমিকা পালন করেছে তাতে আশার অলো কিছু দেখছে না বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ স্বীকার করছে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ওপর আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। এখন উপায় আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ । তবে সেখানেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা হতাশাজনক।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, মিয়ানমার বার বার অঙ্গীকার করেছে যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে। কিন্তু এখন আর কিছুই বলছে না। এখন বন্ধু রাষ্ট্র চীন, জাপান ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ারমারকে চাপ দেবে– এমনটি  আশা করে  বসে আছে।

তবে আন্তজার্তিক বিশ্লেষকগণ তেমন একটা ভরসা করতে পারছেন না। গত সপ্তাহেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে চীন, রাশিয়া। ভোটদানে বিরত থেকেছে ভারত, জাপানের মতো দেশ। আন্তর্জাতিক মহলের এমন ভূমিকায় হতাশ বাংলাদেশের পর্যবেক্ষক মহল।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এই ধরনের গণহত্যার ব্যাপার যখন ঘটে তখন তা দ্বিপাক্ষিক বিষয় আর থাকে না। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়েটি নিয়ে  আন্তর্জাতিক মহলে প্রভাবিত করার ক্ষত্রে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয় মিয়ানমারের নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক রূপ দিচ্ছে, এটা তো দুঃখজনক। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, মিয়ানমার প্রথম থেকেই নিশ্চিত যে  চীন-ভারত তাদের পাশে থাকবে। আর  পশ্চিমা বিশ্বের  বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে মিয়ানমারের সঙ্গে। 

এ অবস্থায় বাংলাদেশকে আরো অনেক বছর রোহিঙ্গা সমস্য নিয়ে ভুগতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি হিসেবে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থীদের চাপ কমিয়ে আনতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরই মধ্যে  প্রায় আড়াই হাজার  কোটি টাকা ব্যয়ে  রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে আবাসন  প্রস্তুত করা হয়েছে। ভাসানচর রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য কতটা উপযোগী, সেটা দেখতে জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দলের নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে ওই সফরটি পিছিয়ে যায়।

গত মাসের শুরুর দিকে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে চার দিনের সফরে ভাসানচর  নিয়ে যাওয়া হয়। ফিরে এসে তারা অবকাঠামোর প্রশংসা করলেও সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো  আগ্রহ দেখায়নি।


বিশ্বব্যাংকের ১০ কোটি ডলার অনুদান

এদিকে, কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং দুর্যোগ-প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণে আরো ১০ কোটি ডলার অনুদান দেবে বিশ্ব ব্যাংক। ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্পের আওতায় এ অনুদান দেবার জন্য গত  বৃহস্পতিবার(১৯ নভেম্বর)  সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগণের জন্য জ্বালানি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং দুর্যোগ-প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণে খরচ হবে এ অর্থ। নতুন এ অনুদান মিলিয়ে ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত মোট ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। -পার্সটুডে

 


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //