কভিড-১৯: ঢিলেঢালা নজরদারি

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালাভাবে চলছে নজরদারি। সীমিত কিছু পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্তের পরিমাণ হাজার থেকে দেড় হাজারের মধ্যে থাকছে বলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মতুষ্টি চলে এসেছে। 

‘বাংলাদেশে করোনাভাইরাস তেমন ক্ষতি করতে পারেনি, সামনের দিনেগুলোতেও তেমন কিছু হবে না।’- এসব আত্মতুষ্টির কথা মানুষ ইতিমধ্যে বলাবলি করছে। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন আত্মতুষ্টির বিরুদ্ধে এখনই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। তারা বলছেন, জনগণের মধ্যে এমন আত্মতুষ্টি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা থামাতে হবে। রাজধানীর সীমিত কিছু এলাকা ছাড়া সরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী তেমন কোনো সার্ভেইল্যান্স নেই। বিপজ্জনক এই ভাইরাসটি কোন অঞ্চলে কি রকম ছড়িয়েছে, তা জানতে সরকারের পক্ষ থেকে তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন আসুক অথবা না আসুক, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বৈজ্ঞানিকভাবে দেশব্যাপী সার্ভেইল্যান্স থাকা উচিত; থাকা দরকার সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি। 

তারা বলছেন, দেশব্যাপী সরকারি হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করে রাখার এখনই সময়। জেলা সদরের হাসপাতালসহ সব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। করোনা না থাকলেও এসব সরঞ্জাম অন্যান্য রোগে কাজে লাগবে ও মাঠ পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছাতে পারলে সার্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত হবে।

আত্মতুষ্টিতে ভুগছে মানুষ

করোনাভাইরাস শেষ না হলেও কিছু মানুষের মধ্যে আত্মতুষ্টি চলে এসেছে। তারা মনে করছেন, গরমের দেশ বলে আমাদের এখানে করোনাভাইরাস খুব খারাপ অবস্থায় নেই। আবার অনেকে মনে করছেন, করোনা নেই বললেই চলে। ফলে তারা সাবধানতার জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধিগুলোও মেনে চলছেন না। আবার এমন অনেকেই আছেন, যারা স্বাস্থ্যবিধি মানতেই চান না, এটিকে বাড়তি ঝামেলা মনে করেন। এসব কারণে সামনের দিনগুলোতে যদি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসে, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিনই হতে পারে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলছেন, আত্মতুষ্টি চলে আসলে এই ভাইরাসটিকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

গ্রামে নেই পরীক্ষার ব্যবস্থা

করোনাভাইরাস পরীক্ষার সব সুযোগ-সুবিধা শহরাঞ্চলের জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা গ্রামে যেতে চান না তাদের মুনাফা হবে না বলে। সরকারিভাবে মুনাফার চিন্তা না থাকলেও শুধু উদ্যোগ গ্রহণের অভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রামের দিকে করা হয়নি। এতদিনে নিদেন পক্ষে প্রতিটি জেলা সদরের হাসপাতালে পরীক্ষার ল্যাবসহ আরটি পিসিআর মেশিন বসানো উচিত ছিল। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনগুলোতে করোনাভাইরাস নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। সে কারণে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার ব্যবস্থা উপজেলা হাসপাতালগুলোতেও নিয়ে যেতে হবে।

পরীক্ষা হয় ব্যক্তিগত আগ্রহে

করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে কি-না তা জানার জন্য মানুষ নিজের আগ্রহেই পরীক্ষা করতে আসেন। দেশব্যাপী দৈনিক যে পরীক্ষা করা হয়, এর সবই মানুষ করে থাকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে। রোগ শনাক্ত হলে ও সরকারি হাসপাতালে এলেই কেবল সরকার চিকিৎসা দিচ্ছে। তা না হলে সরকারের পক্ষ থেকে আগাম কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না। রোগটি যেহেতু সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে, সে কারণে সরকারি উদ্যোগেই সন্দেহভাজন প্রতিটি মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা দরকার।

কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনেও অনিয়ম

শহরে কিংবা গ্রামে কোথাও কোয়ারেন্টিন অথবা আইসোলেশন হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে। তাছাড়া সরকারি পর্যায়ে অধিকসংখ্যক মানুষের কোয়ারেন্টিন করার ব্যবস্থাও নেই। রাজধানীতে কেবল আশকোনা হাজি ক্যাম্প ও দিয়াবাড়ী ছাড়া আর কোথাও সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। 

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যেসব কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছিল, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 

ভারতের সাথে বিমান যোগাযোগ

চলতি সপ্তাহেই ভারতের সাথে নতুন করে বিমান যোগাযোগ শুরু হবে। জানা গেছে, এখন থেকে দৈনিক এক হাজার যাত্রী ভারত থেকে আসতে পারেন। করোনাভাইরাসে ভারত একটি উচ্চ ঝুঁকির দেশ। করোনাভাইরাস শনাক্তে ও রোগের বিস্তারে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় সংক্রমণের দেশ। ভারত থেকে দৈনিক এক হাজার বিমান যাত্রী এলে আগামী এক মাসে ৩০ হাজার যাত্রী আসবেন। 

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে আশকোনা হজক্যাম্প ও উত্তরার দিয়াবাড়ীতে দুটি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র করা হয়েছে। এই দুটি কেন্দ্রে সব মিলিয়ে দুই হাজার জনকে কোয়ারেন্টিন করার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে যাত্রীদের কোথায় কোয়ারেন্টিন করা হবে এর কোনো ব্যবস্থা নেই।

আগামী শীতে লকডাউন হবে না

‘আগামী শীতে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন করা হবে না’- এ ধরনের আগাম সিদ্ধান্ত সরকার ইতিমধ্যেই নিয়েছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ হলে সরকার কি করবে তা না বললেও অর্থনীতির কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশে পরিস্থিতি অবশ্য অত খারাপ নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি অ্যান্ড নো সার্ভিস’ নির্দেশনা মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে চায় সরকার।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //