বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর বিতাড়ন কী আসন্ন?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ।

তার মার্কিন সুরক্ষা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম।

বাংলাদেশ যখন রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জার্নাল পলিটিকো ‘তিনি ভেবেছিলেন আশ্রয়ে আছেন, এখন তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশেদ চৌধুরী তার বর্তমান সুরক্ষা ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আশ্রয় হারাতে পারেন এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোও হতে পারে।

মার্কিন অনলাইন পোর্টাল পলিটিকোর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৭ জুন নীরবে মামলাটি পুনরায় সচল করার উদ্যোগ নেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল বিল বার।

তিনি দেশটির ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ডের কাছে রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় মামলার নথি পর্যালোচনার জন্য তলব করেছেন।

আইনজীবীদের বরাতে পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১৫ বছর ধরে মামলাটি বন্ধ ছিল। তবে এখন তা বারের কল্যাণে পুনরায় ফিরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যে আইন আছে তা রাশেদ চৌধুরী ভেঙেছেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের এ উদ্যোগ গুরুতর অপরাধ করে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া অনেকের জন্য একটি কড়া বার্তা, যা প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার পরও যেকোনো মামলা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।

এ বিষয়ে রাশেদ চৌধুরীর আইনজীবী মার্ক ভ্যান দার বলেছেন, এটি স্পষ্ট যে ট্রাম্প প্রশাসন এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করছে এবং প্রশ্ন হলো তারা কেন এটি করছে?

বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও আইনি নথির ওপর ভিত্তি করে পলিটিকোর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বারের এমন পদক্ষেপে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে আনন্দিত হবে কারণ রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তর করার জন্য দেশটির সরকার বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করা রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য দেশটির প্রতি বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

গত বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারের সাথে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করেই আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পলাতক খুনিকে (রাশেদ চৌধুরী) ফিরিয়ে আনতে চায়, যে একটি স্বাধীন বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর আরেক দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি মহিউদ্দিন আহমেদকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তার তিন ছেলে- ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল, ভাই শেখ নাসের, কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত, যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার স্ত্রী আরজু মনি, শিশু সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ ও আবদুল নাঈম খান রিন্টুসহ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আঠারোজন সদস্য সেদিন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলও নিহত হন। একই দিনে খুনিদের কামানের গুলিতে মারা যান রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার একই পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যও।

১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি রাশেদ চৌধুরী। অভ্যুত্থানে অংশ নেয়ায় রাশেদ চৌধুরী আশ্রয় পেতে পারেন না উল্লেখ করে নিজেদের মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ যুক্তি উত্থাপন করলেও, সেই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে তখন রাশেদ চৌধুরীর পক্ষে রায় দেয় মার্কিন আদালত। -ইউএনবি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //