দেশে সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তি

দেশে সরকারের ১৮টি মন্ত্রণালয়ের অফিস খোলার পর গত রবিবার দিনশেষে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। সোমবার সেই অফিসগুলো বন্ধ থাকে।

করোনাভাইরাস সংকট দেখা দেয়ার পর থেকেই লকডাউন কার্যকর, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা, ভাইরাস টেস্ট, কোয়ারেন্টিন, গার্মেন্টস কারখানা খোলা বা বন্ধ রাখা- এমন বেশ কিছু বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্তহীনতা, বিভ্রান্তি- এমন প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন।

আঠারোটি মন্ত্রণালয় সীমিত পরিসরে খোলার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল কয়েকদিন আগে। সেই মন্ত্রণালয়গুলোতে রবিবার সীমিত পরিসরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতিতে কাজ হওয়ার পর সেদিনই বিকেলে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় মন্ত্রণালয় বা অফিসগুলোই শুধু খোলা রাখা হবে।

চিকিৎসকদের পিপিই বা সুরক্ষা পোশাক সব পর্যায়ের চিকিৎসককে দেয়া হবে কিনা- এনিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার বিষয়টি পরিস্থিতির শুরু থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। আর করোনাভাইরাসের পরীক্ষার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো নানা আলোচনা রয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যাচ্ছে। আসলে পরিস্থিতিটা ক্লোজলি বোঝার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়ে গেছে মনে হয়।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের এখানে মনে হচ্ছে যেন, চিন্তা ভাবনা না করেই একেক সময় একেক ধরণের ভাবনা আসছে। কিংবা অনেক সময় অনেক জায়গা থেকে হয়তো চাপও আসে। সেকারণেও কিন্তু এধরণের সিদ্ধান্তহীনতাটা দেখা যায়।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতা যারা আছেন, তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর সাথে আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলোর কোন যোগসূত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।এবং সেখানে সম্ভবত একটা ফারাক রয়ে গেছে।

সরকারের সিদ্ধান্ত আমলা নির্ভর হয়ে পড়ছে বলে বিশ্লেষকদের অনেক বলছেন।

মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সাবেক একজন সচিব ড. আকবর আলী খান বলছিলেন, ভাইরাসের ঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক চাপ- এই দুই কারণে সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হচ্ছে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, যখনই করোনা নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়, সে ব্যবস্থা একটা কঠোর সিদ্ধান্ত হয়। এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে যেটা সমস্যা সৃষ্টি করে। কাজেই অর্থনৈতিক দিক থেকে একটা চাপ রয়েছে যাতে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া হয়। আবার যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে বিরাট ঝুঁকি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ ধরণের সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও আছে। তবে আরেকটি বিষয় যেটা রয়েছে, সেটি হচ্ছে, বাস্তবায়নের দিক। বাংলাদেশে বাস্তবায়নের দিকেও সমস্যা হচ্ছে।

লকডাউন কার্যকর করা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা শিথিল করা যায়-এনিয়েও বিভিন্ন সময় সিদ্ধান্ত বদল করতে দেখা যায়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি প্রয়োজনে পিপিই বা মাস্ক তৈরির কাজের জন্য গার্মেন্টস কারখানা চালু রাখা যাবে-সরকার এমন সিদ্ধান্ত দিয়ে দায় সেরেছে।

কিন্তু মালিকরা সব ধরণের গার্মেন্টস কারখানাই চালু করছেন দুদিন ধরে। সেজন্য শত শত গার্মেন্টস কর্মীকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মস্থলে এসেছেন অনেক ভোগান্তি সহ্য করে। এসব কারখানায় স্বাস্থ্য বিধি মানার সুযোগ কতটা আছে-তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এক মাস ধরে লকডাউনের মধ্যে দেশ চলছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তাও সরকারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। কিন্তু কিভাবে তা করা যাবে, সে ব্যাপারেও স্থির কোন পরিকল্পনা এখনও নেয়া যায়নি বলে কর্মকর্তারা বলছেন।

সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও করোনাভাইরাস নিয়ে নতুন পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক চাপের কথা তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে একটি নতুন পরিস্থিতি, ফলে অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। আরেকদিকে হলো আমাদের ঘনবসতির দেশ। এত মানুষের জীবন জীবিকা এবং অর্থনীতি- এগুলোও চিন্তা করতে হয়।

ড. রাজ্জাক বলেন, এই যে দেখেন, এখন ধান কাটতে হচ্ছে। হাওড়ের ধান এখনই না কাটলে বন্যায় ভেসে যাবে। তারপর কাঁচামাল বাজারজাত করা, মানুষের প্রয়োজনে ঔষধের দোকান খোলা রাখা, ঠিক তেমনি গার্মেন্টস থেকে সরবরাহ করছে পিপিই-এই সকল দিক বিবেচনা করে কিছু কিছু দিক রিলাক্স করতে হচ্ছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রশাসন এবং বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমেই কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে।-বিবিসি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //