করোনা মোকাবিলায় ৭৩ হাজার কোটির প্রণোদনা ষোষণা প্রধানমন্ত্রীর

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ  ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ রবিবার (৫ এপ্রিল) সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা ও মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি এ চারটি কার্যক্রম নিয়ে করোনা ভাইরাসপ্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। কর্মপরিকল্পনার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় এ টাকা দেয়া হবে।

প্যাকেজগুলো তুলে ধরা হলো:

প্যাকেজ-১ 

ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেয়া, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেয়ার লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেয়া।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। প্রদত্ত ঋণের সুদের অর্ধেক অর্থাৎ ৪.৫০ শতাংশ ঋণ গ্রহিতা শিল্প/ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৪.৫০ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-২ 

ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ সুবিধা প্রণয়ন করা হবে। ব্যাংক-ক্লায়েন্ট রিলেশনসের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ঋণ দেবে।

এ ঋণ সুবিধার সুদের হারও হবে ৯ শতাংশ। ঋণের ৪ শতাংশ সুদ ঋণ গ্রহিতা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করবে এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেবে।

প্যাকেজ-৩

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো: ব্লক টু ব্লক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফের বর্তমান আকার ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। ফলে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্ত হবে। ইডিএফের বর্তমান সুদের হার LIBOR + ১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২.৭৩%) হতে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে।

প্যাকেজ-৪ 

প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম (Pre-shipment Credit Refinance Scheme) নামে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু করবে। এ ঋণ সুবিধার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ।

প্যাকেজ-৫ 

ইতোপূর্বে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

নতুন চারটিসহ মোট পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ হবে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা যা জিডিপির প্রায় ২.৫২ শতাংশ।

সারাবিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে এসব প্যাকেজ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি, আগে ও আজকে ঘোষিত আর্থিক সহায়তার প্যাকেজসমূহ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আমাদের অর্থনীতি পুনরায় ঘুরে দাঁড়াবে এবং আমরা কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।

সবাইকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সম্ভাব্য এই বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরণের জন্য রফতানি খাতের পাশাপাশি দেশীয় পণ্যের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমি সকলকে দেশীয় পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //