আশা ও লক্ষ্যহীন বাংলাদেশের স্প্রিন্টাররা

প্রতিবছরই বাংলাদেশে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কিছু স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদক পান স্পিন্টাররা। এর বাইরে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় (সাফ গেমস) অংশ নেন বাংলাদেশের স্প্রিন্টাররা। অভ্যন্তরীণ আসরে লম্ফঝম্প করলেও দেশের বাইরের কোনো বহুজাতিক আসরে বাংলাদেশিরা যে কতটা অসহায়, তা ভাবলেও অবাক হতে হয়। অর্থাৎ পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের বাইরে স্প্রিন্টাররা বলতে গেলে ‘ফিডারে দুধ পান করা শিশুর মতো’। 

এ পর্যন্ত ১৩ বার সাফ গেমসে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ মাত্র ৬৮টি স্বর্ণপদক জিতেছে। যেখানে ভারত জিতেছে ১২৬৩টি, পাকিস্তান ২৯৭টি, শ্রীলঙ্কা ২৫০টি এবং নেপাল ১২৪টি। বাংলাদেশের ৬৮টি স্বর্ণপদকের মধ্যে স্প্রিন্টারে নেই একটিও। সাফ গেমস ২০০৪ সালের আসরে মহিলাদের ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে বাংলাদেশের নোমান নাহার ব্রোঞ্জপদক জিতেছিলেন। এরপর গত চার আসরে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে বাংলাদেশের পুরুষ কিংবা মহিলা কোনো অ্যাথলেট স্প্রিন্টে পদকের চেহারা দেখেননি। এতেই বোঝাই যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিম্নমানের বহুজাতিক ক্রীড়া আসর সাফ গেমসেই কতটা বাজে অবস্থায়। এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিকে তো স্বপ্ন দেখাটাও পাপ বাংলাদেশের স্প্রিন্টারদের জন্য। 

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পদক পাওয়া স্প্রিন্টারদের বড় বড় ছবি পত্রিকার পাতায় ছাপা হওয়াটাই মনে হয় ক্রীড়াবিদদের একমাত্র চাহিদা। সঙ্গে আরও একটি চাহিদা থাকে তাদের তা হলো আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশগ্রহণের নামে বিদেশ সফর করা। সেখানে আবার কর্মকর্তাদেরও লক্ষ্য থাকে ক্রীড়াদলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া। 

সম্প্রতি শেষ হওয়া জাতীয় অ্যাথলেটিক্সের মূল ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা হয়েছেন সেই ইমরানুর রহমান ও শিরিন আক্তার। লন্ডন প্রবাসী ইমরানুর দ্রুততম মানব এবং নৌবাহিনীর শিরিন দ্রুততম মানবী হয়েছেন। শিরিন এই খেতাব জিতেছেন ১৫ বার এবং আর ইমরানুর ৪ বার। কিন্তু তাদের দৌড় এ পর্যন্তই। সাফ গেমসেও তাদের নিয়ে বেশি কিছু আশা করা ভুল। সেখানে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার স্প্রিন্টারদের তোপে পেছনেই পড়ে থাকেন বাংলাদেশের সেরা সেরা স্প্রিন্টার।  

এদিকে ইমরানুর এ মাসেই ইরানের রাজধানী তেহরানে এশিয়ান ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবেন। আগের আসরে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন। শিরিনের লক্ষ্য প্যারিস অলিম্পিকে খেলা। ওয়াইল্ড কার্ড পেলেই তিনি প্যারিসে যেতে পারবেন। কিন্তু সেখানে তো তাকে খুঁজেই পাওয়া যাবেন না বিশ্ব তারকাদের দাপটে। আসলে বাংলাদেশের স্প্রিন্টারদের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। তাদের যারা কারিগর, যারা অ্যাথলেটিক্সের কর্মকর্তা, যারা ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক, তারা কি কখনো স্প্রিন্ট নিয়ে ভাবেন? নিশ্চয়ই নয়। তাহলে তো স্প্রিন্টারদের ঘোরাফেরা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //