জিমন্যাস্টিকস বিশ্ববসের প্রেরণা কি আমলে নেব

জিমন্যাস্টিকস নিয়ে বাংলাদেশে চর্চা বা বড় স্বপ্ন- কোনোটাই নেই। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও দক্ষিণ এশিয়াতেই মাথা উঁচু করতে পারেনি জিমন্যাস্টরা। ফেডারেশন কর্মকর্তারা গতানুগতিক দায়িত্ব পালন ছাড়া খেলাটির উন্নতির জন্য প্রতিভা অন্বেষণ, সঠিক প্রশিক্ষণের কিছুই করছেন না। তবে আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের (এফআইজি) কর্মকর্তারা কিন্তু ঠিকই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো এফআইজির নির্বাহী কমিটির সভা। সভার স্বাগতিক হতে পারাটা ছিল বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। নভেম্বরের শেষ দিকের ওই সভা বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসে নতুন দুয়ারও খুলেছে।

সভায় অংশগ্রহণ করেন ২৭ দেশের ৩১ সংগঠক। ছয় মহাদেশের জিমন্যাস্টিকস সংস্থার সভাপতি এবং আজারবাইজানের ক্রীড়ামন্ত্রীও ছিলেন। বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস উন্নয়নে ‘ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ শীর্ষক এক সভাও হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন জিমন্যাস্টিকসের বিশ্ব নেতারা। তখন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন এফআইজির সভাপতি মরিনারি ওয়াতানাবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসে সম্ভাবনার কথাই বলেছেন জাপানের এই নাগরিক। দেখিয়েছেন বড় স্বপ্নও, ‘২০২৪ অলিম্পিক বলতে গেলে দুয়ারে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক। আশা করি, সে অলিম্পিকে বাংলাদেশ সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে এবং ভালো করবে। এখন থেকেই তাদের পরিকল্পনা করতে হবে।’

অলিম্পিকে সরাসরি যোগ্যতা অর্জন বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের জন্য অনেক কঠিন। অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একজন জিমন্যাস্ট খেলেছেন। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ নিয়ে খেলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জিমন্যাস্ট সাইক সিজার। সিজারের পর আর কাউকেই এ ধরনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে দেখা যায়নি। তবে এফআইজি সভাপতি বারবার বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের প্রশংসাই করে গেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার আমি বাংলাদেশে আসি আট বছর আগে। এখন অনেক বদলে গেছে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস। আমরা বাংলাদেশ দলের অনুশীলন দেখতে গিয়েছিলাম অডিটরিয়ামে। বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকস অনেক উন্নতি করেছে। জানি না আপনারা কেন বাংলাদেশের জিমন্যস্টিকস নিয়ে নিরাশ। আমি সম্ভাবনা দেখি।’

এফআইজি সভাপতি ২০২৮ অলিম্পিকের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টদের প্রশিক্ষণের জন্য জাপান-কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তা ছাড়া বাংলাদেশের কোরিয়ান কোচের ভূয়সী প্রশংসাই ঝরল তার কণ্ঠে, ‘কোরিয়ান কোচ বেশ উঁচুমানের কোচিং দিচ্ছেন।’ এফআইজির কাছ থেকে প্রেরণা পেয়ে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন কর্মকর্তারা। অনুশীলনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের ১৩ জন জিমন্যাস্টকে। তারা গত ৫ ডিসেম্বর কোরিয়া গেছেন। কোরিয়া জাতীয় দলের সঙ্গে তারা ম্যাচ প্র্যাকটিস করবেন। নতুন জিমন্যাস্ট তুলে আনতে নতুন বছরের জানুয়ারি মাস থেকে স্কুল জিমন্যাস্টিকস শুরু করবে ফেডারেশন।

বিশ্ব জিমনাস্টিকস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ তালিকায় বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় নেই। তালিকায় এশিয়ার উজবেকিস্তানের মিরভালিয়েভ আব্দুল আজিজ, ইসলোমভ খামুয়ান, কাজাখস্তানের করিমি মিলাদ, পাতানিন দিমিত্রি, জাপানের হিরামুতসো কোগা, মিনামি কাজুকি, কায়া কাজুমা, চীনের চেন ঝিলং, মঙ্গোলিয়ার এঙ্কতুভশিন, ফিলিপাইনের কার্লোস এডরিয়ালের মতো তারকা। এমন অবস্থায় জিমনাস্টিকসে বাংলাদেশ কবে ভালো করবে, আর কবে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করবে, তার স্বপ্ন দেখাটাও নিছক আবেগের বিষয়। তবে এটা ঠিক, সঠিক পরিচর্যা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক কিছুই অর্জন করা যায়। কিন্তু আমাদের ফেডারেশন কি তার যোগ্য? তবে এ কথা ঠিক, বিশ্ব জিমন্যাস্টিকস কর্মকর্তাদের প্রেরণা পাওয়াও কিন্তু বিশাল ব্যাপার। ফেডারেশন কর্মকর্তারা তার প্রেরণা থেকে কতটুকু গ্রহণ করবেন বা গ্রহণের চেষ্টা করবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //