দ্য ঈগল; অপরাজিত এক ফাইটারের অশ্রুসিক্ত বিদায়

একই সঙ্গে ধর্মীয় রীতি মানা ও মার্শাল আর্টের মতো খেলা চালিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ধরুন, কয়েকদিন পর টুর্নামেন্ট, কিন্তু চলছে মাহে রমজান। সেই খেলোয়াড় ঠিকই রোযা রাখবে, নামাজও আদায় করবে সময়মতো।

এতে তার খেলার কোন সমস্যা হয়নি। বরং নতুনরূপে হয়েছেন উজ্জীবিত। আত্মিক শান্তির সঙ্গে লড়াইয়ের মেলবন্ধন ছিল বেশ। সেটার প্রমাণ রিংয়ে তার জ্বলজ্বলে পারফরম্যান্স। খেলোয়াড় পরিচয়ের চেয়ে তার কাছে বড় ছিল তিনি মুসলিম।

তিনি খাবিব নুরমাগোমেদাভ। দুরন্ত লড়াকু মনোভাবের জন্য তার আরো একটি নাম আছে, দ্য ঈগল। মিক্সড মার্শাল আর্টের জীবন্ত কিংবদন্তী। ক্যারিয়ারে ২৯ বার রিংয়ে নেমে সবকটিতেই জিতেছেন, স্কোরটা তাই এমন ২৯-০। দুরন্ত ফর্মে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধারাবাহিক চোট।

সবাইকেই এক সময় থামতে হয়, থামলেন খাবিবও। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও জিতলেন দারুণ ছন্দে। বিদায় জিনিসটাই বিরহের। রিংয়ে তাই আপ্লুত হলেন রাশিয়ান এই ক্রীড়াবিদ। অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানালেন বর্ণিল ক্যারিয়ারকে।

রাশিয়ায় ১৯৮৮ সালে জন্ম নেয়া খাবিব ছিলেন বাবার ভীষণ অনুগত। বাবার স্বপ্ন পূরুণেই হেঁটেছেন সব সময়। শেষ বেলায় অতৃপ্তি তাও থেকে গেল বলতে গেলে। কারণ বাবার স্বপ্ন ছিল স্কোরটা ৩০-০ হোক। কিন্তু এক ধাপ আগেই বিদায় বলতে হলো খাবিবকে।

খুবই ধর্মপ্রাণ খাবিব। তার একটি উক্তি ছিল বেশ সারা জাগানো। যেখানে তিনি বলতেন, ‘যখন আল্লাহ তোমার সাথে, কেউই তোমাকে হারাতে পারবে না। এতে তোমার বিশ্বাস থাকতে হবে।’

গত দুটি বছর বলতে গেলে খেলতেই পারেননি খাবিব। আর সেটা হাঁটুর ইনজুরির কারণে। তিন পঞ্জিকা বর্ষে তিন ফাইনালের মধ্যে একটি খেলতে পেরেছেন। বাকি দুটিতে অংশ নিতে পারেননি। এর মধ্যে ছিল চোট, অসুস্থতা, বিরূপ ভাগ্য। পাশাপাশি প্রতি বছরের রমজান মাসে সব কিছু থেকেই নিজেকে বিরত রাখতেন খাবিব। ফলে প্রতিযোগিতা মূলক টুর্নামেন্টে তার অংশ গ্রহণ কম ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।

৩২ বছর বয়সী খাবিব প্রথম মুসলিম হিসাবে জিতেছেন ইউএফসি টাইটেল। দুইবারের কমব্যাট সাম্বো চ্যাম্পিয়ন। মার্শাল আর্ট প্রিয় ইভেন্ট হলেও তিনি বেশ পারদর্শী ছিলেন জুডো ও রেসলিংয়েও। ভীষণ জনপ্রিয় খাবিব তার ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ২৩ মিলিয়ন।

ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে খাবিব পরাজিত করেন জাস্টিন গায়েথজেকে। ম্যাচের পর অঝরে কেঁদেছেন মুখে সুবিন্যাস্ত কালো দাড়ির অধিকারী খাবিব। বিদায় বেলায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। স্মরণ করেন প্রায় এক দশক আগে পরপারে পাড়ি জমানো তার বাবাকে।

অনেকটা হাঁফিয়ে হাঁফিয়ে খাবিব বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাকে সবকিছুই দিয়েছেন। ধন্যবাদ সবাইকে। যারা আমার সাথে ছিলেন। সাপোর্ট করেছেন। বাবা ১০ বছর ধরে ছিলেন আমার সাথে। শেষ বেলায় তিনি নেই। যদিও অন্যভাবে ছিলেন তিনি আমার সাথে। ধন্যবাদ আমার গোটা টিমকে। আমি বলতে চাই, এটাই আমার শেষ ম্যাচ।’

খাবিবের বাবা আব্দুলমানাপোভিচ গত জুলাই মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবা ছিলেন তার কোচও। তার সবগুলো ম্যাচে রিংয়ের বাইরে উপস্থিত থাকতেন তিনি। বাবাকে হারানোর পর তাই মুষড়ে পড়েন খাবিব। তার মা বলেছিলেন আর খেলা চালিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। মাকে কথা দিয়েছিলেন সেটাই হবে। শনিবার আবুধাবিতে জাস্টিনকে হারিয়েই আচমকা বিদায়ের ঘোষণা দেন খাবিব।

অবসরের পর আফগান ক্রিকেটার রশিদ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন দ্য ঈগলকে। রশিদ খান উল্লেখ করেন, আল্লাহ আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি সহায় হোন এবং আপনার বাবার প্রতিও, যিনি ছিলেন গ্রেটম্যান। অবসর সময় উপভোগ করুন। খাবিব, ভাই আমার, আপনি সকল মুসলিমের জন্য গর্বের।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //