দেশের হয়ে অলিম্পিকে খেলতে পারা অনেক গৌরবের: রোমান সানা

দেশের প্রথম তীরন্দাজ, যিনি যোগ্যতার বলে সরাসরি টোকিও অলিম্পিকে লাল-সবুজ পতাকার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন। দেশসেরা তীরন্দাজ মোহাম্মদ রোমান সানার সাথে তার ক্যারিয়ারের নানান বিষয়ে কথা বলেছেন আশরাফুল ইসলাম আকাশ।

তীরন্দাজ হওয়ার পেছনের গল্প কী?

ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলতাম; কিন্তু এ খেলার (তীরন্দাজ) প্রতি আমার আগ্রহ জন্মাবে নিজেও জানতাম না, হঠাৎ করেই চলে আসা। আসলে ছোটবেলা থেকেই সবসময় নতুন কিছু করার ইচ্ছে ছিল। বিদ্যালয়ে থাকতে সর্বপ্রথম হাসান স্যার বললেন, আর্চারিতে এক সপ্তাহের ক্যাম্প হবে, তোমরা যদি কেউ যেতে চাও তাহলে যেতে পার। প্রথম দিন যাইনি, পরে স্যার আমাদের কয়েকজনকে সেখানে নিয়ে যান। ছেলেবেলায় কখনো কখনো সুতোয় বাঁধা তীর দিয়ে খেলেছি, এখন তো বাস্তবেই খেলছি।

যোগ্যতার বলে সরাসরি টোকিও অলিম্পিকে লাল-সবুজ পতাকার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন, অনুভূতি কেমন লাগছে?

এ জগতে আসার পর থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল দেশের হয়ে একদিন অলিম্পিকে খেলব। যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আমার হাত ধরেই হোক কিংবা সহপাঠীর হাত ধরেই হোক, দেশের জন্য পদক জয় করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা!

অনুশীলন কেমন চলছে?

প্র্যাকটিসের মধ্যেই আছি, ভালো চলছে। টানা তিন-চারটা গেম বাতিল হয়ে গেছে। অফিসিয়াল গেম না খেললে অভিজ্ঞতা হয় না। নার্ভাসনেসটা বেশি কাজ করে। ভেবেছিলাম প্রতি মাসে একটা করে টুর্নামেন্ট খেলব; কিন্তু এখনো টুর্নামেন্ট খেলতে পারিনি। এটা আমার জন্য ভালো নয়।

অলিম্পিকে আপনার লক্ষ্য কী থাকবে?

যেহেতু প্রথমবার খেলতে যাচ্ছি চেষ্টা থাকবে সেরা পারফরম্যান্সটা দেয়ার। অলিম্পিক পদক জেতাটা ভাগ্যের ব্যাপার তারপরও যদি আল্লাহ সহায় হন তাহলে সম্ভবও হতে পারে। আমিতো ভবিষ্যৎ পরিসংখ্যান বলে দিতে পারি না (হা হা)।

কোচের (মার্টিন ফ্রেডরিক) কাছ থেকে কেমন সহায়তা পাচ্ছেন?

উনার প্রশংসা যতই করব, ততই যেন কম হয়ে যাবে। কোচ হবার জন্য সবধরনের গুণই তার আছে। উনার মতো একজন কোচ আমরা পেয়েছি। কোচ (মার্টিন ফ্রেডরিক) আসার পর থেকেই আর্চারির সবকিছু পবির্তন হয়ে গেছে। তার বিষয়ে নতুন করে কি বলব, এতগুলো অর্জন, এত সফলতা সবকিছুর পেছনের কারিগর কিন্তু তিনিই। উনি না আসলে হয়তো পেতাম না (সফলতা, পদক)। উনি যেসব টেকনিক শিখিয়েছেন সেগুলো কাজে লাগাতে চাই। আশা করবো, ২০২২ সালের পরেও যেন চুক্তি নবায়ন করে বাংলাদেশ আর্চারির সাথে থাকেন তিনি।

বিশ্ব আর্চারি নির্বাচনে সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়ে ১০তম স্থানে অবস্থান করছেন, অনুভূতি কী?

শুকরিয়া আদায় করছি। এত বড় একটা রেজাল্ট যেটির জন্য পদক পেয়েছি, এটা আমার জন্য বড় সাফল্য পাশাপাশি দেশ ও ক্রীড়াঙ্গনের জন্যও বড় সাফল্য। আশা করছি, এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভবিষ্যতে যেন ভালো কিছু করতে পারি দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারি। সবাই দোয়া করবেন।

তীরন্দাজে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

এখনো ১০ বছর খেলার ইচ্ছে আছে। এক সময় সবারই পারফরম্যান্স শেষ হয়ে যাবে। চিন্তাভাবনা আছে, যদি কর্তৃপক্ষ সুযোগ দেন তাহলে আমার অর্জন ও অভিজ্ঞতাগুলো ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। তারা যেন আমার চেয়ে অধিক সফল হতে পারে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাব।

পরিবার থেকে কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?

বাবা পছন্দ করতেন না। প্রথমদিকে যখন জাতীয় দলে সুযোগ হলো দেশের বাইরে খেলতে গেলে বাসা থেকে টাকা এনে খেলতে হতো। আসলে নিজের হাতখরচ নিজেরই চালাতে হতো। সে অবস্থাতে বাবা চাইতেন না আর্চারি খেলি, পড়াশোনাতে মনোযোগী হই। মা আমাকে খুব সাপোর্ট দিতেন, ধৈর্য্য ধরতে বলতেন, এক সময় সফলতা আসবেই বোঝাতেন; কিন্তু বাবা চাইতেন পড়ালেখা করি বা অন্য খেলা খেলি।

তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য কী বলবেন?

সবসময়ই একটা কথায় বলবো, দেখ কঠোর পরিশ্রম ছাড়া কখনোই সফলতা অর্জন করা যায় না আর সব সময় সৎ থাকবে। আরেকটা জিনিস ‘না হারলে কখনোই জয় করতে পারবে না’ হার থেকেই মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করেন। ‘নেভার গিভ আপ’ যতক্ষণ জান আছে লড়ে যাও। তাহলে সফলতা একদিন তোমার হাতে ধরা দেবেই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //