দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে নস্টালজিক পালাবদল

পরপর দুবার হেরে গিয়ে শেষ পর্যন্ত জিতলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রাবোউ সুবিয়ান্তো। অবশ্য তার এ জয়ের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন দুইবারের প্রতিপক্ষ প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো (তিনি জোকোউ নামে পরিচিত)। ক্ষমতাসীন ইন্দোনেশিয়ান পার্টি ফর স্ট্রাগলের (পিডিআই-পি) প্রার্থী গানজার প্রানোউকে হারিয়ে ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী জেরিন্দ্রা পার্টির প্রাবোউর এই জয় অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। আবার অনেকে বলছেন প্রাবোউর পপুলিস্ট অর্থনৈতিক কর্মসূচি ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৫৮ শতাংশ ভোট। ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন জোকোর ছেলে জিবরান রাকাবুুমিং রাকা।

ইন্দোনেশিয়ার সংবিধান অনুসারে কেউ দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। জোকোউ ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন। তবে প্রাবোউ এ দায়িত্ব নিলে সেটা কার্যত জোকোর আরেকটি মেয়াদ হবে বলে অনেকে মনে করছেন। জোকোর কাছে ২০১৪ ও ১৯ সালে প্রাবোউ হেরে যান। অবাক করার ব্যাপার জোকো দ্বিতীয় মেয়াদে প্রাবোউকে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেন। প্রাবোউ সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর সময়ে সেনাবাহিনীর জেনারেল সুহার্তোকন্যা সিতি হেদায়াতি হারিজাদিকে (তিতিয়েক নামে পরিচিত) বিয়ে করেন। যদিও পরে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু রাজনৈতিক সহযোগী হিসেবে তারা কাজ করছেন। তিতিয়েক এই নির্বাচনে প্রাবোউর পক্ষে প্রচার চালান। অন্যদিকে প্রাবোউ তিতিয়েককে দলের সিনিয়র উপদেষ্টা পদে রেখেছেন। 

৭২ বছর বয়সী প্রাবোউর মানবাধিকার রেকর্ড ভালো নয়। তিনি ছিলেন সুহার্তোর মতো কট্টর জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিজম বিরোধী। ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট সুহার্তো ১৯৬৬ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত ৩২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। গণ-আন্দোলনের মুখে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে আন্দোলন দমনে বিক্ষোভকারীদের কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাবোউ। এ ছাড়া পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা সংগ্রাম দমনে যথেচ্ছ শক্তি ব্যবহারের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে। তিনি অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রাবোউর বিরুদ্ধে অভিযোগ যা-ই থাক বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে তিনি তরুণ জনগোষ্ঠীর কাছে নিজের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়েছেন। 

বিশ্বের চতুর্থ জনবহুল দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশির জন্ম ৮০-এর দশকের পর। সুহার্তোর শাসনামল তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে সুহার্তোর শাসনামল যে পুরোটাই কালিমাচ্ছন্ন ছিল তাও নয়। তার সময় ইন্দোনেশিয়া শক্ত অর্থনৈতিক ভিতের ওপর দাঁড়ায়। প্রাবোউ পপুলিস্ট ধারার অর্থনীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। যেমন তিনি স্কুলে দুপুরের খাবার দেওয়ার কর্মসূচি আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। এর ফলে আগে থেকেই চাপে থাকা বাজেট ঘাটতি আরও বাড়বে। যে কারণে জোকোর অর্থমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা শ্রি মুলায়ানি ইন্দ্রাবাতি প্রাবোউর অধীনে থাকছেন না বলেই ধরে নেওয়া যায়। ইন্দ্রাবাতি একজন সংস্কারপন্থি অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। 

প্রাবোউ সুহার্তোর স্মৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে চলেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম কিছু নজির তৈরি হয়েছে। যেমন ফিলিপাইনের এক সময়ের স্বৈরশাসক ফার্দিনান্দ মার্কোসের ছেলে বংবং মার্কোস জনতার রায়ে আবার দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। অথচ ১৯৮৬ সালে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে পতন ঘটেছিল মার্কোসের ২১ বছরের স্বৈরশাসনের। মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদ ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ২০০৩ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। ১৫ বছর পর তিনি আবার ওই পদে ফেরেন। এরপর তারই উত্তরসূরি আনোয়ার ইব্রাহিম এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //