তান্ত্রিক শিল্পকলা: প্রতীক ও দেহাত্মবাদের আদিসূত্র

‘তন্ত্র’ পুরো পৃথিবীরই বলা যায় প্রাচীনতম মতাদর্শ। তবে বঙ্গীয় অঞ্চলে ‘তন্ত্র’ যতটা প্রসার লাভ করেছে এবং সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন ধারা-উপধারা তার সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোনো অংশেরই তুলনা চলে না। সেই সূত্রে বলা চলে ‘তন্ত্র’ বাংলার একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য; যা তার কাছে আগত সব মতাদর্শকে নিজের মতো করে বদলে দিয়েছে। ফলত আমরা দেখতে পাই তান্ত্রিক ঘরানার বৈদিক, জৈন, বৌদ্ধ ও মুসলিম মতাদর্শ। যারা প্রত্যেকেই তন্ত্রের সংস্পর্শে অনেকটাই তান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। যদিও সাম্প্রতিককালে ‘তন্ত্র’ শব্দটি শুনলেই আমাদের ভ্রু যুগল কুঁচকে ওঠে। এর কারণ কেবলই ‘তন্ত্র’ সম্পর্কে অজ্ঞতা। কেননা ‘তন্ত্র’ সম্পর্কে গভীর অধ্যয়নে বোঝা যাবে, একেবারে সাম্প্রতিক পৃথিবীর প্রভাবশালী মতাদর্শ ‘উত্তরাধুনিকতা’র সঙ্গে তন্ত্রের পার্থক্য শুধু সময়ের। উত্তরাধুনিকতা যেমন হায়ারার্কি, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ, যুগ্ম বৈপরীত্য, কর্তৃপক্ষের একাধিপত্য ইত্যাদিতে বিশ্বাসী নয়; তন্ত্রও প্রাচীন সময়ে, প্রাচীন ভাষায় বলেছে একই কথা। কিন্তু তন্ত্রের উপর ইতিহাসের ধুলো-ময়লার স্তূপ এত ভারী হয়ে জমেছে যে, এসব সরিয়ে তার আসল রূপটি ধরতে পারা বেশ জটিল প্রক্রিয়া। ‘তন্ত্র’ বৃহৎ বঙ্গীয় মানুষের জীবন যেভাবে প্রভাবিত করেছিল তার একটি গভীর ছাপ এখনো বঙ্গীয় ভূমি সন্তানেরা সচেতন বা অবচেতনে বয়ে বেড়াচ্ছে। কাজেই তান্ত্রিক দর্শন এখনো বঙ্গীয় জনমানুষের জন্য পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক।

‘তন্ত্র’ একটি সম্পূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন দর্শন। যদিও ভারতীয় দর্শন ধারার নয়টি প্রস্থানে আলাদাভাবে তন্ত্রের উল্লেখ নেই। কিন্তু সব ভারতীয় দর্শনের শেকড় খুঁজতে গেলে দেখা যাবে তন্ত্রের মৌলিক ভাবনার বাইরে তেমন কেউই যেতে পারেনি। নতুন কিছু নিয়ম-পদ্ধতির সংযোগে কেবল একটি আলাদা ধারা হিসেবে নিজেদের বিকশিত করেছে। তবে কারও বিবেচনায় ‘তান্ত্রিক দর্শনও একটি স্বতন্ত্র দার্শনিক সম্প্রদায়’ (চিন্তাহরণ চক্রবর্তী ১৩৬২ বঙ্গাব্দ : ১৬-১৭)। অন্যান্য দর্শনের মতো তন্ত্রকে সম্পূর্ণ প্রণালিবদ্ধ আকারে পাওয়া যায় না বিধায় কিংবা তন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন রূপ থাকার কারণেও বিভ্রম তৈরি হতে পারে। তন্ত্র দর্শন আকারে স্বীকৃত হয়েছে মাধবাচার্যের ‘সর্বদর্শন-সংগ্রহে’।

মাধবাচার্য নকুলীশ পাশুপত, রসেশ্বর প্রভৃতি কয়েকটি তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের দর্শনের বিবরণ দিয়েছেন তার গ্রন্থে (Madhava  Acharya1882: 103, 137)। তান্ত্রিক দর্শনের সঙ্গে অন্যান্য দর্শনের পার্থক্য হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, অন্যান্য দর্শন সম্প্রদায়গুলোতে প্রায়োগিক দিকের চেয়ে তাত্ত্বিক দিকের গুরুত্ব অনেক বেশি বিধায় কোনো সন্দেহের উদ্রেক হয় না। তন্ত্র অনেক বেশি মাত্রায় প্রায়োগিক বলে একে দর্শনের চেয়ে জীবনপদ্ধতি বা সাংস্কৃতিক রীতি বলেই বিচার করা হয়। কিন্তু সব তত্ত্বই মূলত প্রয়োগের নিমিত্তে উত্থাপিত হয়, সেই বিবেচনায় তন্ত্রকে দর্শন হিসেবে আরও শক্তিশালী বলে মনে করাই যুক্তিসঙ্গত। নিক ডগলাস তার যোগ ও তন্ত্র বিষয়ক গ্রন্থে গামপোপা মুনির উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন : The Tantras represent a philosophy comprehensive enough to embrace the whole of knowledge, a system of meditation which will produce the power of concentrating the mind upon aûthing whatsoever, and an art of living which will enable one to utiliæe each activity of Body, Speech and Mind, as an aid to the path of Liberation (cited: Nik Douglas 1971:Contents). 

মানব-মুক্তির সার্বিক দর্শন হলো তন্ত্র। তন্ত্রশাস্ত্রের প্রধান লক্ষ্য আপামর জনসাধারণের মুক্তি। তান্ত্রিক মতাদর্শের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- তন্ত্র কেবল মানুষের কথা ভাবেনি, সে ভেবেছে মানুষের বাইরে সব প্রাণ-প্রকৃতিসহ মানুষের কথা। মানুষের দেহ ও মনের সর্ববিষয়ে তন্ত্রের রয়েছে নিজস্ব অবস্থান। তন্ত্র মানুষের মাঝে কোনো ভেদ-বিভেদকে স্বীকার করে না, তান্ত্রিক সাধন পদ্ধতিতে সবার অধিকার সমান। ‘কুলজ্ঞানী হলে চণ্ডালও হয় ব্রাহ্মণের বাড়া। কুলধর্মরত ব্যক্তিই কুলজ্ঞানী হতে পারেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে চণ্ডালও কুলধর্ম গ্রহণ করতে পারেন। মহানির্বাণতন্ত্রে একথা স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে। তাতে আছে- বিপ্র থেকে আরম্ভ করে অন্ত্যজ পর্যন্ত সব মানুষ কুলাচারে অধিকারী। বর্ণাশ্রম-স্বীকৃত বৈদিক ধর্মে চণ্ডাল প্রভৃতি অন্ত্যজের এরূপ অধিকার নাই’ (উপেন্দ্রকুমার দাস ১৩৮৩ : ৬)। সব মানুষের সমান অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীনযুগের ভারতীয় জ্ঞানের সব শাখায় ছিল তন্ত্রের বিস্তার। দর্শনের অন্যান্য শাখা তন্ত্রের মতো এতটা ব্যাপক আকারে জীবনের সঙ্গে জড়িত নয়। কোনোটি শাখা জগতের উৎপত্তি, কোনোটি সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, কোনোটি শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ের দিকে ঝুঁকে থাকলেও তন্ত্র এক্ষেত্রে একটি সার্বিক বিষয়। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজ স্মারক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘তন্ত্র সম্বন্ধে আলোচনায় মনে রাখতে হবে যে, তন্ত্র Black Magic, ভোজবাজি বা জাদুবিদ্যা নয়, ... গতানুগতিক আঙ্গিককরণ, বিচিত্র উপচার, মন্ত্রের উচ্চারণ ও বিভিন্ন হস্তমুদ্রার প্রদর্শনই তন্ত্রানুষ্ঠান নয়’... (স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ ১৩৫৯ : ভূমিকা, নয়)। জীবনকে শান্তিময় করে গড়ে তুলতে এবং শাশ্বত আনন্দের সন্ধানে পরিচালিত হয় তন্ত্রের কর্মপ্রক্রিয়া। তন্ত্র জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বস্তরের সব অনুষঙ্গের সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

তন্ত্র শব্দের ভেতরেই রয়েছে তান্ত্রিক মতাদর্শের মৌলিক বিষয়ের ইঙ্গিত। ‘The Shabda Shakti Prakashika’ থেকে আর্থার অ্যাভেলন উদ্ধৃত করেছেন, ‘The word Tantra has various meanings, and amongst others Shastra generally, and therefore does not necessarily denote a religious Shastra’ (cited : Arthur Avalon 1952: 40)। তন্ত্রকে একটি ধর্ম অথবা কোনো গুপ্তবিদ্যার আধার এমন ভাবনার বিস্তার ঘটেছে ইতিহাসের নানা পর্বের বিবিধ প্রতিকূল পরিবেশে। তারপরও সাম্প্রতিককালে তন্ত্র বলতে ব্যাপক অর্থে যে কোনো পদ্ধতি বা শাস্ত্রকে বোঝানো হয়। যেখানে মতাদর্শের পরিপূর্ণতা রয়েছে, রয়েছে বৈচিত্র্যময় বিষয় ও অভিব্যক্তির প্রকাশ।  ‘Depending on the context, Tantra means a shuttle (in weaving), the warp (of a fabric), continuity, succession, descendence, a continuous process, the carrying out of a ceremo, a system, a theory, doctrine, a scientific opus, or a section in a book (Andre Van Lysebeth 1995: 4)।  

তন্ত্র শব্দের ব্যবহার দেখা যায় বহুবিধ পদ্ধতিতে যেমন, গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র-রাজতন্ত্র-পুরুষতন্ত্র ইত্যাদি একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি বোঝালেও শুধু ‘তন্ত্র’ বলতে আমরা সাধারণ প্রাচীন বৃহৎবঙ্গীয় ভূখণ্ডে প্রচলিত তান্ত্রিক আচার-আচরণ ও প্রথা-পদ্ধতিকেই বুঝি। আমাদের আলোচনার লক্ষ্যও সুদূর প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা প্রচলিত তান্ত্রিক প্রথা। ‘The Sanskrit term tantra derives from the verb tan meaning to expand, and thus, it literally denotes athing that can be stretched or extended like threads on a loom (M. C. Joshi 2002: 39)।  

বুৎপত্তিগত দিক থেকে ‘তন্ত্র : যাহা দ্বারা আধেয়-আধারের (পুরুষ-প্রকৃতির) সমুচ্চিত-সম্মিলন (জোড়) দ্বারা কোনো দেহব্যবস্থাকে (জড়দেহ, জীবদেহ, সমাজদেহ, রাষ্ট্রশরীর... প্রভৃতিকে) সুবিন্যস্তভাবে সক্রিয় রাখা হয়। ... সন্তান, বংশ, শ্রেণি। বয়নসাধনযন্ত্র (তাঁত), সূত্র, তন্তুবায় (তাঁতি), পরিচ্ছদ। (কলিম খান রবি চক্রবর্তী ২০১৩: ৩১২) ইত্যাদি। পাণিনি ‘তন্ত্রকা’ শব্দের অর্থ প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি হলো এমন কাপড় যা এসেছে তাঁত থেকে, এবং তন্ত্রকা শব্দটি থেকে এসেছে তন্ত্র থেকে (N.N. Bhattacharyya 2005: 48)। আমরা জানি তাঁতশিল্প বা বুননশিল্পের সঙ্গে বাংলার ইতিহাসের প্রগাঢ় সংযুক্তির বয়ান। তন্ত্র শব্দের অর্থের দিক থেকে বিবেচনা করলে বিষয়টি অনুধাবনের কিছু সূত্র পাওয়া যায়। প্রাচীন সমাজের কিছু প্রধান চাহিদার সঙ্গে এর সংযোগকে চিহ্নিত করে তন্ত্রকে অনুধাবন সম্ভব হয়ে ওঠে। ‘The literal meaning of tantra is to weave, to expand, to spread, and according to tantric adepts, we can achieve true and everlasting fulfillment only when all the threads of the fabric of life are woven according to the pattern designated by nature (Pandit Rajmani Tigunait 2004: 1)। 

তন্ত্রকে তার আক্ষরিক অর্থ থেকেও অনুধাবন করা যায়। জীবনের বুননকে প্রাকৃতিক নকশা অনুযায়ী পরিচালিত করার যে পদ্ধতি সেটিই তন্ত্র। প্রাকৃতিক নকশা হলো প্রকৃতিকে তার মতো মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে জীবনযাপন করার পদ্ধতি। আধুনিক মানস যাকে স্বীকার করতে রাজি নয়, আধুনিক মানস প্রকৃতিকে বশ করে তার উপর প্রভুত্ব স্থাপনে বিশ্বাসী হওয়ায় তান্ত্রিক মতাদর্শ তাদের সঙ্গে মানানসই নয়। কিন্তু আধুনিকতার সমস্যাবলি এবং আধুনিকতার তৈরি বিপর্যয় সমকালীন মানুষের জীবনকে নানাভাবে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে, যার ফলে আমরা বুঝতে শিখেছি আধুনিকতাই শেষ কথা নয়, বরং জীবনকে জগতের সঙ্গে একীভূত করে বৈপরীত্যের বাইরে গিয়ে যথাযথ সহাবস্থানই হতে পারে অপেক্ষাকৃত বাস্তবানুগ পন্থা, যা তন্ত্রের মৌলিক ভাবনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ: …to the chief potion or essence of a thing, to simply au rule, theory or scientific work (Mahàbhàrata 13.48.6). Probably derived from the root tan, to weave or stretch, tantra is most often used to refer to a particular kind of text, which is woven of the extended threads of maû words. Yet, as Padoux points out, such texts may or may not contain materials that we today think of as Tantric. (Hugh B. Urban 2003: 4).

তন্ত্র শব্দটির অনেক অর্থ থাকলেও সবগুলোই বুনন সম্পর্কিত। তন্ত্র সাধনা জীবন-বুননের সুতাগুলোকে পুনরায় জোড়া দিয়ে জীবন চালানোর পক্ষপাতী, দেহ সাধনা বা যোগের বিভিন্ন পদ্ধতিতে তন্ত্র এই সংযোগ সাধনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে। যোগ, প্রাণায়াম, মুদ্রা, আচার-অনুষ্ঠান, কু-লিনী যোগ, যন্ত্র, মণ্ডল, রসায়ন, কৃষি, আয়ুর্বেদ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, শত শত আপাত রহস্যময় পদ্ধতি, জাগতিকতা ও মহাজাগতিকতার সমন্বয়ে রচিত হয়েছে তান্ত্রিক শাখা-প্রশাখার বিস্তার। তন্ত্রমতে মহাবিশ্ব ও মানবদেহ হলো সুসমন্বিত একটি সৃষ্টি, এদের একটিকে বোঝার জন্য অপরটি বোঝা জরুরি। জ্ঞানের সব শাখায়ই ঘটেছে তন্ত্রের বিস্তার, আর্থার অ্যাভেলন যেমন বলেন, ‘Tantra, they deal with nearly every subject of knowledge-theogonies, cosmogonies, genealogies, chronology, the astronomical, physical, and other sciences (Arthur Avalon 1952: 44)। বহুযুগের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তান্ত্রিকগুরুরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, মহাবিশ্বের সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় শক্তি ক্ষুদ্র মানবদেহেই বিদ্যমান রয়েছে। মানুষই সৃষ্টির চূড়ান্ত রূপ, তাই মানুষকে বুঝতে পারার মাধ্যমে মহাবিশ্ব সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করা হলো তান্ত্রিক সাধনার সর্বোচ্চ পর্যায়। এ লক্ষ্যে তান্ত্রিক সাধকরা শব্দের শক্তি (মন্ত্র) রূপ, বর্ণ, আকৃতি (যন্ত্র), নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মানব ও প্রকৃতির বিভিন্ন দিকের উপর তাদের প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। তারা প্রাণিকুল, ঔষধি জিনিসপত্র এবং খনিজ পদার্থের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যসমূহ অধ্যয়ন করেছেন এবং মন্ত্র ও যন্ত্রকে সক্রিয় করে মনের সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করার উপায় খুঁজে বের করেছেন। তন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সাধনায় সিদ্ধি লাভ, এই সাধনা কোনোভাবেই প্রার্থনা-পূজা-উপাসনা নয়, বরং পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অধ্যয়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে জাগতিক সাফল্য অর্জনের সঙ্গে যুক্ত। ইতালীয় দার্শনিক জুলিয়াস ইভোলা তার ‘The Yoga of Power : Tantra, Shakti, and the secret way’ গ্রন্থে তন্ত্র সম্পর্কে বলেন: The special virtue of the Tantra lies in its mode of Sadhana. It is neither mere worship [upasana] nor prayer. It is not lamenting or contrition or repentance before the Deity. It is the Sadhana which is the union of Purusha and Prakrti; the Sadhana which joins the Male Principle and the Mother Element within the body, and strives to make the attributed attributeless... Thus Tantras often employ an analogy taken from medicine: the efficacy of a doctrine, like a drug, is proved by the results it produces, and in this particular case, by the siddhis, or powers, that it grants. Another text says: Yoga siddhis are not obtained by wearing yoga garments or by conversation about yoga, but only through tireless practice. This is the secret of success. There is no doubt about it. (Julias Evola 1992: 3).

তন্ত্র কোনো দেবতা বা দেবীর কাছে কল্যাণের জন্য প্রার্থনা, উপাসনা বা নিবেদন নয়; এটি হলো শক্তি সাধনার একটি প্রক্রিয়া; যার মাধ্যমে পুরুষ-প্রকৃতির যথার্থ সংযোগের মাধ্যমে মানুষ আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। তন্ত্রের পুরুষ-প্রকৃতির ব্যাখ্যা রয়েছে সাংখ্য দর্শনে। পুরুষ হলো সচেতনতা বা আত্মা আর সবই প্রকৃতি। ‘All manifestation is based on a fundamental dualism: a male principle known as Purusha (Person) and a female principle known as Prakriti (Nature). (Ajit Mookerjee 1971: 29)। পরবর্তীকালের নারী-পুরুষ ব্যাখ্যায় তাই তৈরি হয়েছে অনেক ধোঁয়াশা, সৃষ্টি হয়েছে শিব-শক্তি, প্রজ্ঞা-উপায়, রাধা-কৃষ্ণ ইত্যাদি। কিন্তু এর মূল লক্ষ্য হলো- মানবদেহ, প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব নিয়ে সুসংবদ্ধ চিন্তা ও কর্ম প্রবাহের মাধ্যমে মানুষকে যোগ্য করে গড়ে তোলার অনুশীলন। এই প্রক্রিয়ায় তান্ত্রিকরা আবিষ্কার করেছেন যে, ঔষধি, খনিজ, মণিরত্ন, গ্রহ ও নক্ষত্রদের শক্তি কীভাবে দেহের উপর তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। এ সব গবেষণা অবশেষে যোগ সাধনা, আয়ুর্বেদ, জ্যোতিষশাস্ত্র, রসায়ন ইত্যাদি পদ্ধতিতে ফলিত হয়েছে, যা বিভিন্ন তান্ত্রিক গ্রন্থ এবং এ বিষয়ক সাহিত্যে নথিবদ্ধ হয়েছে (Pandit Rajmani Tigunait 2004: 11-12)। শব্দার্থগত দিক থেকে তন্ত্র বুনন বা কাপড় বা তাঁতের সঙ্গে সম্পর্কিত। বুনন যেমন সুতায় সুতায় গেঁথে তৈরি করে একটি পূর্ণাঙ্গ কাপড়, তন্ত্রও তেমনিভাবে মহাবিশ্বের প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে মানব জীবনকে উপলব্ধি করতে বলে। নিক ডগলাস যেমন বলেন : The word Tantra implies a process of weaving and expansion. The inner and outer worlds, microcosm and macrocosm, are like the two sides of a fabric. This fabric, composed of all the elements and energies of the Universe... (Nik Douglas 1971: 1)। 

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা থেকে অতিকায় মহাজগৎ পর্যন্ত সব শক্তির পারস্পরিক সম্পর্ক তন্ত্রের অনুধ্যানের বিষয়।N.N. Bhattacharyya তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘History of The  Tantric Religion : An Historical, Ritualistic and Philosophical Study’ তে উল্লেখ করেছেন, ‘প্রাচীন লেখাপত্রে পাওয়া তন্ত্র শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থের দিক থেকে বলা যায় এটি কোনোভাবেই ধর্মীয় বা অতীন্দ্রিয় কোনো অর্থের সঙ্গে যুক্ত নয়। বৈদিক শাস্ত্রেও তন্ত্রের অর্থ হলো কাপড় বা তাঁত। শ্রুতি শাস্ত্র বলছে তন্ত্র অর্থ হলো এমন একটি কর্ম-পদ্ধতি যা বহু ভাগে বিভক্ত এবং অনেক ধরনের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক কোনো কর্ম প্রক্রিয়া হলো তন্ত্র’ (N.N. Bhattacharyya 2005: 19)। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের এই মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য, অন্য অনেক গবেষকের মতোই তন্ত্রকে তিনি অতীন্দ্রিয়, অলৌকিক অথবা ধর্মীয় বিষয়ের সঙ্গে বিযুক্ত করে অবলোকন করার প্রয়াস নিয়েছেন। যদিও তিনি ব্যুৎপত্তিগত অর্থটিকে সামনে এনেছেন, তবে এর বাইরেও তন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে এমন অনেক ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে যাতে এটি মনে করা অসঙ্গত হবে না যে, তন্ত্রের সঙ্গে প্রচলিত অর্থে ধর্ম বা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের আসলে কোনো সম্পর্ক নাই। তন্ত্রের উৎপত্তি ও চর্চার ইতিহাস মূল্যায়ন করলে এ বিষয়টি যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গেই মনে করা যেতে পারে। তিনি মনে করেন, তন্ত্র একটি অত্যন্ত বিস্তৃত বিষয় যা মানুষের সুদীর্ঘকালের প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টার ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এবং এই ঐতিহ্যকে সম্পূর্ণরূপে উপস্থাপন করা প্রায় অসম্ভব। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেবল তন্ত্রের ধর্মীয় উপাদানগুলো নিয়েই কাজ হয়েছে (N.N. Bhattacharyya 2005: 45)। ফলত এটি একটি ধর্মে রূপান্তর হয়েছে অথবা একে ধর্ম মনে করে অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে তুলনা বিচারে একে অবজ্ঞা করা হয়েছে।

তন্ত্র কোনো ধর্ম তো নয়ই, কোনো অতীন্দ্রিয় আধ্যাত্মিক সাধনার বিষয়ও নয়। এটি একটি বাস্তববাদী জীবন পদ্ধতি। যেখানে সচেতন মনের সঙ্গে অচেতন ও অবচেতনের সংযোগ সাধনের মাধ্যমে মানুষকে তার শক্তি সম্পর্কে উপলব্ধি করতে শেখায়। তাই তন্ত্রের প্রধান সাধনাই শক্তি-সাধনা, সেটি আধ্যাত্মিকতা লাভের কোনো অনুষঙ্গ নয় বরং যাপিত জীবনের সঙ্গে মানসিক ও শারীরিক শক্তির যথার্থ সংযোগের প্রয়াস। শক্তি সাধনার প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন প্রতীক, প্রতীকের চর্চা করতে গিয়ে হয়েছে তান্ত্রিক চিত্রকলার বিস্তার। যেহেতু মানবদেহই হলো উপলব্ধির কেন্দ্র, তাই দেহকেই প্রতীকের প্রধান আধার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তন্ত্রের সাধনা তাই দেহসাধনা, নামান্তরে দেহতত্ত্ব। মানুষ তার শরীরকে উপলব্ধির মাধ্যমেই বাকি জগতের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্মাণ করে। তাই দেহ বিষয়ে তার গভীর অনুধ্যান। এর ফল বিবিধ প্রতীক। কু-লিনী থেকে সহস্রার পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিষয়েই তন্ত্র আশ্রয় নিয়েছে প্রতীকের, ফলত অনেক কিছুই সাধারণের অধরা থেকে যাচ্ছে। প্রতীকগুলোকে চেনার জন্য যতটুকু জানাশোনা প্রয়োজন, সাধারণ সংসারি মানুষের পক্ষে তা অর্জন করা দুরূহ বলেই এখানে লেগে গেছে আধ্যাত্মিকতা ও গুপ্ত রহস্যের ছাপ, এই সুযোগে জুটে গেছে কিছু অসাধু ভাগ্যান্বেষী মানুষ, যারা তন্ত্রকে ক্রমাগত আরও রহস্যময় করে তুলেছে। কিন্তু তন্ত্র বাস্তববাদী মানুষের শক্তি সম্পর্কিত তাত্ত্বিক আচার। তান্ত্রিক দর্শনে সাধনা, শিল্পকলা, আত্মোপলব্ধি, ব্যক্তিকে অতিক্রম করে সামষ্টিকতার অনুভব,  প্রতীকী প্রকাশ- এগুলো ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। 

তন্ত্র মানুষের আত্মশক্তিকে উপলব্ধি করার স্বার্থে তৈরি করেছে নিজস্ব প্রতীকী শিল্পভাষা। মানুষ ও প্রকৃতিসহ মহাবিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ও উপলব্ধির ক্ষেত্রে তান্ত্রিক শিল্পকলা পালন করে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা। স্ত্রী জননাঙ্গ কিংবা পুরুষ জননাঙ্গকে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হলেও ক্রমান্বয়ে এই প্রতীকই প্রধান হয়ে ওঠে, যাকে এক ধরনের বিকৃতি কিংবা পথচ্যুতি হিসেবে বর্ণনা করা যায়। আসল ব্যাপারটি খুব সহজেই অনুমেয়। এখানে পূজা, সাধনা বা প্রার্থনা মুখ্য বিষয় নয়, এটি শক্তির অনুধ্যান। উৎপাদন শক্তির সাধনা ছাড়া উৎপাদনে সুফল পাওয়া কঠিন। তাই মানুষ শক্তির সাধনা করেছে। সেই শক্তি অবশ্যই কোনো বাইরের শক্তি নয়, সেটি ব্যক্তির নিজের আত্মদৈহিক শক্তি যার মাধ্যমে সে জাগতিক কর্মে আত্মনিয়োগ করবে। শক্তি সাধনার জন্য বাহ্যিক শরীরই প্রধান উপাদান, তাই শরীরকে প্রস্তুত করতে হবে, আর শরীর কোনো বিচ্ছিন্ন বস্তু নয়; তার সঙ্গে মন বা আত্মা বা চৈতন্য দ্বৈতাদ্বৈতভাবে চলমান; দেহাত্মবাদ, দেহ ও আত্মার একাকার অবস্থায় তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকে না। শরীর ও মনকে শক্তির সাধনায় নিয়োজিত করার জন্য তান্ত্রিক পদ্ধতি হলো যোগ। যেখানে বিভিন্ন শারীরিক অনুশীলন, দমের নিয়ন্ত্রণ ও একাগ্রতা তৈরির অভ্যাস (ধ্যান বা মেডিটেশন) ইত্যাদির সমন্বয়ে আত্মশক্তিকে অনুভব করার সক্ষমতা তৈরি হয়। এসবের যথার্থ প্রয়োগের জন্য তৈরি হয়েছে বহুবিধ প্রতীকের ব্যবহার। অজিত মুখার্জি যেমন বলেন : ... a new sign language symbolizing the man-universe relation was discovered and used. Thus the method of yoga assumed a great importance in art; Tantric art itself can be considered one of the essential forms of yoga. To penetrate the enigmatic silence, the mystery of the universe, the shilpi-yegin has employed the yogic process (though he sometimes gets through to the core by his mental faculties-manas), (Ajit Mookerjee 1971: 12)

শক্তির সঙ্গে সাধকের সংযোগ স্থাপনে প্রয়োজন হয় কিছু নিয়ম নীতির যা তান্ত্রিক শিল্পকলার মূল লক্ষ্য। তান্ত্রিক শিল্পের প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয় ‘যন্ত্র’, যা মূলত আকার, আকৃতি, রং ও রেখার মাধ্যমে মানব বৈশিষ্ট্যে প্রভাব তৈরিতে সক্ষম বলে মনে করা হয়। ‘যন্ত্র’ হলো এক ধরনের জ্যামিতিক চিত্র, সাধনার স্থানে যা স্থাপিত বা অংকিত হয়। প্রধানত এদের প্রতিসম গুণাবলি এবং নান্দনিক কারণে মানুষের উপর প্রভাব রাখতে সক্ষম। ঐতিহ্যগতভাবে একেক ধরনের যন্ত্র একেক শক্তির আরাধনায় ব্যবহৃত হয়। যদিও সমকালীন সময়ে ধর্মীয় প্রভাবে এত গভীরভাবে এই যন্ত্রগুলোকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়েছে যে, এখন এগুলোকে এক একজন দেব-দেবীর প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য এই যন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই প্রতীকী যন্ত্রের ব্যবহার হয়ে আসছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক ড. দিলীপ চক্রবর্তী তার ‘The archaeology of Hinduism’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন : From the earlier prehistoric period there exists only one piece of evidence from a late upper Palaeolithic  context (c. 9000-8000 BCE) at Baghor I in the upper Son valley. In the centre of a roughly circular rubble-built platform (c. 85 cm in diameter), a triangular piece of natural stone, 15 cm high, 6.6 cm wide and c. 6.5 cm thick was found. There is no doubt about the association between this stone and the platform; nor is there aû dispute about the Upper Palaeolithic date of the complex. The stone displays yellowish brown to reddish brown ellipsoidal or triangular laminations, the arrangement of which is similar to a vulva. This is of interest as exactly the same kind of stone which occurs on the top of a hill near the modern village of Baghor is still collected, put on the top of a rubble platform under a tree and worshipped by villagers as the female principle or Shakti in the name of one Mai (mother) or another (Kenoyer et al. 1983). This practice would appear to have continued, almost in an unchanged physical form, apparently from the final stage of the Upper Palaeolithic.(Dilip Chakrabarti 2001: 36)

দিলীপ চক্রবর্তীর বিশ্লেষণ অনুসারে দেখা যাচ্ছে, শক্তি সাধনা এবং এর জন্য প্রতীকের ব্যবহার কোনো নতুন বিষয় নয়। পুরনো প্রস্তর যুগ থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের মাঝে এমন প্রতীকের ব্যবহার একটি সাধারণ ব্যাপার। ‘Archaeological Survey of India’র সাবেক মহাপরিচালক মনীশ চন্দ্র যোশী বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের নিরিখে দেখিয়েছেন, এই অঞ্চলে তান্ত্রিক প্রতীকের ব্যবহারের ইতিহাস অন্তত ২০,০০০ (বিশ হাজার) বছরের পুরনো বিষয়; কার্বন-১৪ পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও এটি প্রমাণ হয়েছে, যা এখনো নানা রূপে চলমান রয়েছে। যোশী বলেন : The earliest example of an Indian mother goddess figurine dates to the Upper Paleolithic. Found in the Belan Valley near Allahabad in Uttar Pradesh by the late G. R. Sharma, the image is made of bone and is carved in the round; in shape it resembles a harpoon. On the basis of carbon 14 determinations, it has been dated between 23,840 (plus or minus 830 years) B.C. E. and 17,765 (plus or minus 340 years) (M. C. Joshi 2002: 39).

যদিও মনীশ চন্দ্র যোশী সমসাময়িক ধর্মীয় প্রভাব কিংবা তার ব্যক্তিগত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে (mother goddess) ‘মাতৃদেবী’ হিসেবে তান্ত্রিক প্রতীক ব্যবহারের উল্লেখ করেছেন। (কিন্তু আমরা কীভাবে এতটা নিশ্চিত হব যে, ‘মাতৃদেবী’ তথা আরাধনা উপাসনার অংশ হিসেবেই এসব প্রতীকের ব্যবহার হয়েছে? এসব ভাবনা কি তৎকালীন সময়ের উপর সমকালীন চিন্তার প্রতিফলন নয়?) প্রাচীন প্রতীকগুলো দেব-দেবীর প্রতীক হিসেবে যদিও ব্যাপকভাবে প্রচার ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তবুও সহজেই একটি বিষয় আমাদের বোধগম্য হয় যে, এগুলো শক্তি সাধনার প্রতীক। দৃশ্যশিল্পে এমন প্রতীক দর্শকের মনে একটি বিশেষ ভাব তৈরিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তন্ত্র তাই শূন্য অবস্থায় সাধনার চেয়ে কোনো একটি প্রতীকের ব্যবহারকে সহজ মনে করেছে।

তান্ত্রিক মতাদর্শ তার সাধনার প্রয়োজনে প্রতীকের ব্যবহার করতে থাকলেও ব্যাপারটি এখানেই স্থির থাকেনি। আমরা দেখতে পাই যন্ত্র (আকার, আকৃতি, নকশা, প্রতীকের শক্তি), মন্ত্রের (শব্দের শক্তি) সঙ্গে সঙ্গে প্রতীক ক্রমান্বয়ে ভিন্নরূপে বিবর্তিত হচ্ছে। এমনকি যন্ত্রের উপর দেবী বা দেবতার প্রতিমাও জুড়ে দেয়া হচ্ছে কালক্রমে। উৎপাদন শক্তির ধ্যানের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সাধনার জন্য স্থাপিত প্রতীকের কাছে আবেদন নিবেদন। বলা যায় এই আবেদন নিবেদন এমন অবস্থায় পৌঁছে গেল যে সাধক ভুলেই গেছে, এটি তার নিজস্ব শক্তি অর্থাৎ মনোদৈহিক শক্তির বিকাশের জন্য মনোসংযোগের প্রক্রিয়া। নিজের শক্তির কথা ভুলে গিয়ে সমস্ত শক্তির অধিকারী বানিয়ে দিলো স্থাপিত প্রতিমার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে। উত্তরাধুনিক পরিভাষায় যাকে বলা যায় ‘হাইপার রিয়েলিটি’। তবে এমন কল্পনা শক্তির ফলেই তৈরি হতে থাকল নতুন নতুন ফর্ম। তান্ত্রিক চিত্রকলা তাই কোনো নির্দিষ্ট ফর্মে আবদ্ধ থাকেনি। যন্ত্রের প্রতীকের বাইরে দেহ সাধনায় সহায়তার নিমিত্তে তান্ত্রিক শিল্পী দেহ অঙ্কন করেছে বিভিন্ন মাত্রা, মুদ্রা, ভঙ্গি ও প্রতীকে।

The aim of the Tantric ritual is to heighten forms of human power to their full expression so as to merge Kundalini, the unconscious form-principle in the human body, with Purusha, the formless consciousness. To achieve this aim, one utiliæes the Tantric yoga-asanas configurations of certain forces and moods. When one practices a particular asana Ôwith the mind fixed in abstract meditationÕ (as the Sanskrit root yug for yoga indicates), one may gain that particular intensified mood or feeling, The mudras (yogic postures and gestures) specifically produce physiological diagrams which fulfil the same functions as mantras and yantras, releasing particular forces and energies of the mind. (Ajit Mookerjee 1971: 32)

তান্ত্রিক চিত্রকলা তাই মূর্ত-বিমূর্ত-প্রকাশবাদী নানা ভঙ্গিতে বিস্তার লাভ করেছে। চিত্রকলায় মানবদেহ অঙ্কনের প্রতি যে গুরুত্ব দেয়া হয় শিল্পীর দক্ষতা অর্জনের নিমিত্তে, তান্ত্রিক চিত্রকলায় সেটি বলা যায় বাধ্যবাধকতা। কেননা যদি কু-লিনী (সুপ্ত শক্তি) জাগরণের প্রসঙ্গ আসে তাহলে দেহের মাঝে কু-লিনীর অবস্থান শনাক্ত করা জরুরি। তান্ত্রিক চিত্রকর্ম তাই ফর্ম থেকে ফর্মহীনতায় এবং কল্পনা থেকে বাস্তবতায় সার্বক্ষণিক বিচরণকারী শিল্প।

তান্ত্রিক শিল্পে ‘যন্ত্র’ ছাড়াও ‘মণ্ডল’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘মণ্ডল’ হলো বৃত্ত। এটি একটি জ্যামিতিক নকশা, যা ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক বোঝায়। মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্য, আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার হাতিয়ার হিসেবে, আন্তঃশক্তি ও বহিঃশক্তির সংযোগ ও সামগ্রিক অস্তিত্বের প্রতীক হিসেবে মণ্ডল ব্যবহৃত হয়। মণ্ডলের কিছু সাধারণ প্রতীকের মধ্যে রয়েছে চাকা, ঘণ্টা, ত্রিভুজ, পদ্ম ও সূর্য। একটি চাকার বৃত্তাকার প্রকৃতি একটি নিখুঁত মহাবিশ্বের শৈল্পিক উপস্থাপনা হিসেবে কাজ করে। তান্ত্রিক দীক্ষার আচার-অনুষ্ঠানে মণ্ডল ব্যবহার করা হয়। মণ্ডল যন্ত্রের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। মণ্ডল ব্রহ্মাণ্ডের সব শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। মণ্ডলের কেন্দ্র একটি পবিত্র স্থান হিসেবে যেমন মহাবিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করে একই সময়ে সাধকের অস্তিত্বকেও বোঝায় ব্রহ্মাণন্ডের অংশ হিসেবে। মণ্ডল আঁকা হয় সাধকের ভেতর ও বাইরের জগতের দৃশ্যকল্প রূপে। মণ্ডল সৃজনশীল মানুষের জন্য বিশেষ কার্যকরী একটি নকশা।

তান্ত্রিক চিত্রাবলি মূর্ত, বিমূর্ত, বহুমুখী ও বহুরূপের সমাহার। এই চিত্রাবলি কখনো কখনো অতি বিমূর্তায়িত হয়ে উঠতে পারে এর ভাবকল্পকে উপস্থাপনের প্রয়োজনে। নির্দিষ্ট কোনো চিত্র নির্দিষ্ট কোনো শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। তান্ত্রিক শিল্পের আকর্ষণীয় দিক হলো এর চারপাশে আধ্যাত্মিক (আত্মা সংক্রান্ত ধারণার রূপায়ণ, অলৌকিক নয়) আভা। এটি কেবল শিল্পের একটি রূপ নয়। এটি ধ্যানের একটি রূপ এবং পরম শক্তির প্রকাশ। তান্ত্রিক শিল্পী তার শিল্প সৃজনের সময় একে একটি পবিত্র কর্ম হিসেবেই সম্পাদন করে। এই চিত্রগুলোতে সাধারণত ব্যবহৃত হয় লাল, কালো, সবুজ ও সোনালি রঙ। তান্ত্রিক চিত্রকলায় রঙ সবসময় একটি অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। In Tantric painting, this division is indicated by the colours red and white, red symboliæing the feminine essence (rakta) and white, the male essence (sveta). (Ajit Mookerjee 1971: 26)। তাছাড়া তন্ত্রের বিভিন্ন শাখায় রঙের আলাদা আলাদা অর্থেরও পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন বৌদ্ধ তন্ত্রে প্রায়ই পঞ্চ-বর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- সাদা, হলুদ, লাল, নীল ও সবুজ। কালো হত্যা ও ক্রোধের প্রতীক, সাদা বিশ্রাম ও চিন্তা বোঝায়, হলুদ সংযম ও পরিপুষ্টি, লাল অধীনতা ও তলব করা বোঝায় এবং সবুজ খারাপ শক্তির বিতাড়ন বোঝাতে ব্যবহৃত হয় (Nitin Kumar: Feb 2002)। বহু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে তান্ত্রিক চিত্রকর্মের সন্ধান পাওয়া যায়। সাধারণত কাগজ ও কাপড়ে এই ধরনের চিত্রগুলো রচিত হয়। আর্য-মঞ্জুশ্রী-মূলকল্পে এ ধরনের ছবি আঁকার একটি বিভাগ রয়েছে। বাঙালি পটুয়া শিল্পীরাও তান্ত্রিক চিত্র-ঐতিহ্য অনুসরণ করে। পাল আমলের চিত্রকলাতেও দেখা যায় তান্ত্রিক প্রভাব। কিছু পা-ুলিপিতে বজ্রযান ও তন্ত্রযান অনুসারে দেব-দেবীর মূর্তি আঁকা হয়েছে। এসব প্রমাণ করে যে বঙ্গীয় অঞ্চলের চিত্রকলায় তন্ত্র একটি প্রভাব বিস্তারী ধারা। আরও গভীর বিশ্লেষণে একথা নিশ্চয় প্রতীয়মান হবে যে, এই অঞ্চলের শিল্প প্রবাহে তন্ত্রের অনুপ্রেরণাই মৌলিক শিল্প অনুষঙ্গ। কেননা তন্ত্রের প্রাচীনতার সঙ্গে সঙ্গে এর বিভিন্ন আচার-আচরণের সঙ্গে স্থানীয় চিন্তা-মননের সংযোগের ফলে সৃজনশীল প্রকাশের ক্ষেত্রেও শিল্পীরা তন্ত্রের শরণ নিয়েছেন।

তান্ত্রিক চিত্রকলা অভ্যন্তরীণ অনুভবের অদেখা বস্তুর দৃশ্যায়নের স্বার্থে কল্পনাকে প্রখর করে তোলে। যার জন্য শিল্পীকে অনেক বেশি একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। শুক্রাচার্যের ভাষ্য মতে,  “There exists no form of concentration more absolute than that by which images are created. Direct seeing of a tangible object never allosw of such an intensity.”  (উদ্ধৃত:Ajit Mookerjee 1971: 13)। শিল্পীরা অভিন্ন নিয়ম-নীতি অনুসরণ করলেও দৃশ্যায়ন করার সময় নিজস্ব মানসিক অবস্থাকে ও কল্পনার বিভিন্নতাকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তোলেন। Art is not a profession but a path toward truth and self-realiæation both for maker and spectator. Tantra has a great message for this awareness. (Ajit Mookerjee 1971: 15) তান্ত্রিক শিল্পী সমগ্র শিল্পজগৎকেই একটি বার্তা দেয় যে শিল্পকর্ম একটি মহত্তম বিষয়, সেটি হোক দর্শকের প্রেক্ষিতে কিংবা শিল্পীর। ভারতীয় উপমহাদেশে বৈদিক শাসকদের শাস্ত্রীয় বাঁধনের অনেক আগে থেকেই স্বাধীন শিল্পচর্চা হয়ে এসেছে। মনোদৈহিক শক্তির সাধনায় শিল্পকর্ম পালন করেছে তার নিজস্ব ভূমিকা। ব্রাহ্মণ্যবাদের ঐক্য সাধনের প্রক্রিয়ায় আত্মীকৃত হয়েছে বিবিধ বৈচিত্র্যের তান্ত্রিক ভূমি। জার্মান ভারততত্ত্ববিদ অধ্যাপক হেনরিখ ভন স্টাইটেনক্রন বলেন : This, indeed, is a case where nationalist politics in a democratic setting succeeded in propagating Hindu religious unity in order to obtain an impressive statistical majority when compared with other religious communities. It is a manipulated majority which would certainly appear much less dominating, if the two largest religious communities in present-day India, the Vaishnavas and the Saivas, would be recogniæed as having distinctly separate, though culturally cognate, religious origins. (Stietencron 1995:52)

ভারতের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী ব্রাহ্মণ্য জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে ফেলার পরেও বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত মতাবলম্বী জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিকভাবে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। তাছাড়া বৌদ্ধ, জৈন ও বাউল সম্প্রদায় ছাড়াও রয়েছে আরও বিভিন্ন উপ-সম্প্রদায়; যাদের তান্ত্রিক উত্তরাধিকার সুস্পষ্টভাবেই চিহ্নিত করা যায়। ফলত এই অঞ্চলের বৃহত্তম মতাদর্শের নামও তন্ত্র। তান্ত্রিক মতাদর্শের অনুসরণেই নির্মিত হয়েছে অনেক ধর্মীয় আচার-আচরণ ও সংস্কার। বলা যায় তান্ত্রিকতাই নানা নামে প্রচলিত রয়েছে সমাজের ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক অনুশীলনের বিভিন্ন পর্যায়ে। এই মতাদর্শের প্রবল শক্তি ও আকর্ষণকে উপেক্ষা করতে পারেনি পার্শ্ববর্তী নেপাল, তিব্বত, চীন, জাপান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মানুষ। তান্ত্রিক শিল্প বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্মের আবরণে ছড়িয়ে পড়েছে এসব দেশে। কেননা তান্ত্রিক শিল্পকলা কেবলই আধ্যাত্মিক রহস্যেরই খোঁজ দেয় না, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব জীবনের আটপৌরে সমস্যার সমাধানেও শক্তি সাধনার মাধ্যমে ভূমিকা রাখে। (সাম্প্রতিককালে যোগ-সাধনার বৈশ্বিক বিস্তারই এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। যোগ প্রশ্নাতীতভাবেই তন্ত্রের প্রায়োগিক দিক, যার সঙ্গে ধর্মীয় সংযোগ নির্দিষ্ট মতাদর্শিক বিষয়; যোগ-সাধনার সঙ্গে কোনো মৌলিক সংযুক্তি নেই।) শিল্পীর স্বাভাবিক সৃজনমুখরতার যে আকাক্সক্ষা সেটি যথার্থভাবেই পূরণ করার সক্ষমতা রাখে তান্ত্রিক শিল্পকলা। শিল্পকলার অগ্রগতিতে ইউরোপের একক ভূমিকার বিষয়েও সন্দেহ তৈরি করেছে তান্ত্রিক শিল্পকলার গড়ন-চিন্তন ও তাত্ত্বিক গভীরতা। বিমূর্ত শিল্পকলার বিষয়ে যেমন একটা প্রাথমিক ধারণা হলো- এটি পাশ্চাত্যের নিজস্ব উৎপাদন, এই ধারণা তান্ত্রিক শিল্পকলার সামনে এসে হতচকিত হয়ে পড়বে নিশ্চিত; কেননা এমন বিমূূর্ততার চর্চা তান্ত্রিক ধারায় হয়ে এসেছে বহু শতাব্দী ধরেই। মন্ত্র, মণ্ডল, যন্ত্র, ধ্যান, অনুশীলন ইত্যাদির রূপ যথার্থই বিমূর্ত। বাস্তবানুগ বিষয় চিত্রায়ণের সঙ্গে সঙ্গে তান্ত্রিক শিল্পী চর্চা করেছে অতীন্দ্রিয় সাধনের আধ্যাত্মিক বিষয়। তাই তান্ত্রিক চিত্রকলা পেয়েছে বিভিন্ন মাত্রা ও রূপের বিন্যাস। এই উত্তরাধুনিক সময়েও তান্ত্রিক চিত্রকলা পৃথিবীর শিল্পজগৎকে নতুন প্রেরণা ও সূত্রের সন্ধান দেওয়ার সক্ষমতায় পরিপূর্ণ। আদি উৎস থেকে সাম্প্রতিক প্রবহমানতায় তান্ত্রিক চিত্রকলা নতুনভাবে অভিনিবেশের দাবি রাখে।

তথ্যসূত্র
* কলিম খান রবি চক্রবর্তী (২০১৩), সরল শব্দার্থকোষ ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থের অভিধান, একুশ শতক, কলকাতা
* উপেন্দ্রকুমার দাস (১৩৮৩ বঙ্গাব্দ), কুলার্ণবতন্ত্রম, (সম্পাদিত),  নবভারত পাবলিশার্স, কলিকাতা 
* চিন্তাহরণ চক্রবর্তী (১৩৬২ বঙ্গাব্দ),  তন্ত্রকথা, (বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ, সংখ্যা-১০৩), বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়, কলিকাতা
* স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ (১৯৫৮), তন্ত্রে তত্ত্ব ও সাধনা (মহামহোপাধ্যায় গোপীনাথ কবিরাজ স্মারক-বক্তৃতা), শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, কলিকাতা
* অলরঃ গড়ড়শবৎলবব (১৯৭১), Tantra Art: Its Philosophy & Physics, Published by Ravi Kumar, Basel, Paris, New Delhi
* Andre Van Lisabeth (1995), Tantra The Cult of the Feminine, (First published in English), Samuel Weiser, Inc., York Beach, Maine
* Arthur Avalon (1952), Principles of Tantra, (Edited),  Ganesh& Co., (Madras) Ltd., Madras 
* Dilip Chakrabarti (2001), ‌‘The archaeology of Hinduism’, Timothy Insoll, (eds.)  Archaeology and World Religion, Routledge, USA, and Canada
* Hugh B. Urban (2003), Tantra Sex, Secrecy, Politics, and Power in the Study of Religion, University of California Press, Berkeley and Los Angeles, California, London
* Julias Evola (1992), The Yoga of Power: Tantra, Shakti, and the Secret Way, Translated by Guido Stucco, Inner Traditions International, Rochester, Vermont
* Madhava  Acharya (1882), The Sarva-Darsana-Samgraha, translated by E. B, Cowell and A. E. Gough, Trubner & Co., London 
* M. C. Joshi (2002), ÔThe History and Development of TantraÕ, The Roots of Tantra, (Editors: Katherine Anne Harper and Robert L. Brown), State University of New York Press, New York
* Nitin Kumar (Feb 2002), Color Symbolism In Buddhist Art, http://ww.wexoticindia.com
* Nik Douglas (1971), Tantra Yoga, Oriental Publishers, New Delhi
* N.N. Bhattacharyya (2005), History of The  Tantric Religion, An Historical, Ritualistic and Philosophical Study, First published 1982, Manohar Publishers & Distributors New Delhi.
* Pandit Rajmani Tigunait (2004), Tantra Unveile. Seducing the Forces of Matter and Spirit, Second Printing, The Himalayan Institute Press, Honesdale, Pennsylvania, USA
* Stietencron, H.von. (1995), Religious Configurations in Pre-Muslim India and the Modern Concept of Hinduism. In Dalmia, V. and Stietencron, H.von. (eds), Representing Hinduism. Sage Publications, Delhi
* Thomas McEvilley (2002), ‘The Spinal Serpent’, The Roots of Tantra, (Editors: Katherine Anne Harper and Robert L. Brown), State University of New York Press, New York

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //