আরবি সাহিত্যকে বড়পর্দায় আনছেন নির্মাতা মারওয়ান হামেদ

বেস্টসেলিং আরবি উপন্যাসকে বড়পর্দায় এনে নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন মিশরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মারওয়ান হামেদ। তিনি আলা আল আসওয়ানির ‘দ্য ইয়াকুবিয়ান বিল্ডিং’ ও আহমেদ মুরাদের ‘দ্য ব্লু এলিফ্যান্ট’ উপন্যাস অবলম্বনে যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তা মিশরের বক্স অফিসে রেকর্ড ভেঙেছে। হামেদের সর্বশেষ চলচ্চিত্র আহমেদ মুরাদের ‘১৯১৯’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত, এই চলচ্চিত্রটির নাম ‘কিরা অ্যান্ড এল জিন’। ব্রিটিশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মিশরের প্রতিরোধের গল্প নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘১৯১৯’।

আগামী ২৮ এপ্রিল আবুধাবিতে অনুষ্ঠিতব্য আরবি প্রকাশনা ও সৃজনশীল শিল্পের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে (কংগ্রেস পিসিআই) হামেদ বক্তৃতা দেবেন। তিনি মিশরীয় অভিনেতা করিম আবদেল আজিজ এবং মিশরীয় চিত্রনাট্যকার আহমেদ মুরাদের ‘ফিল্মমেকিং অ্যালকেমি : দ্য ডায়নামিক রিলেশনশিপ বিটুইন লিটারেচার অ্যান্ড ফিল্ম অ্যাডাপ্টেশনস’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেবেন। হামেদ সাম্প্রতিক সময়ে আরবি সাহিত্য বিষয়ে চলচ্চিত্র বানিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে সুনাম অর্জন করেছেন। সম্প্রতি তিনি আরবভিত্তিক সাময়িকী ‘পাবলিশিং পার্সপেক্টিভস’-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন।

সেখানে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আমার খুব আসক্তি ছিল। আমি রোয়াল্ড ডালের সব লেখা পড়েছি, তখন থেকে আন্তর্জাতিক ও আরবি সাহিত্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফিল্ম স্কুলে পড়ার সময় নাগিব মাহফুজ ও ইউসুফ ইদ্রিসের কাজের প্রেমে পড়ি। ইউসুফ ইদ্রিসের তিনটি ছোটগল্পকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছি। আমি যে উপন্যাসগুলো নিয়ে কাজ করেছি, সেগুলো আমার কল্পনা ও আবেগকে তাড়িত করেছে, এজন্য চলচ্চিত্র বানিয়েছি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে মারওয়ান হামেদ বলেন, ‘উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র বানানোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো সময়কাল। সাধারণত একটি ৫০০ পৃষ্ঠার উপন্যাস ১২০ পৃষ্ঠার স্ক্রিপ্টে পরিণত হয়। এ ছাড়া চলচ্চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা মাধ্যম। এটি একটি ভিজ্যুয়াল মাধ্যম। তাই একটি চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী দর্শকের কাছে সহজে পৌঁছাতে পারে, কারণ আমরা সবাই ভিজ্যুয়াল বুঝতে পারি। অন্যদিকে সাহিত্য প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে ভাষা; কিন্তু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য ও অভিযোজন একটি বিশাল প্রক্রিয়া। এটি শব্দগুলোকে চিত্রে রূপান্তর করে, একই সঙ্গে উপন্যাসটিকে আরও সিনেম্যাটিক করে তোলে।’

মারওয়ান হামেদের চলচ্চিত্রগুলো সমসাময়িক মিশরীয় সাহিত্যের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ বাড়িয়ে তুলেছে। তিনি আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশরীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চলচ্চিত্রকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এ প্রসঙ্গে মারওয়ান হামেদ বলেন, ‘আমি মিশরীয় সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। সাহিত্য ও চলচ্চিত্র থেকে পৃথিবী নিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। যেমন-ইতালীয়, জাপানি ও কোরিয়ান সিনেমা তাদের সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে, আর এটিই শিল্পের সৌন্দর্য। আমিও যদি একই কাজ করতে পারি, তাহলে দুর্দান্ত কিছু হবে।’

মূলত আলা আল আসওয়ানির উপন্যাস ‘দ্য ইয়াকুবিয়ান বিল্ডিং’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি একটি যুগান্তকারী কাজ হয়েছে। এই চলচ্চিত্র সমসাময়িক মিশরীয় তথা আরবি চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ছাপ রাখতে সহায়তা করেছে। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে গল্পকে প্রাধান্য দিতে চান।

তার ভাষ্য, ‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গল্প। আমি নিজেকে প্রশ্ন করি গল্পটা ভালো লেগেছে কি না, আমার আবেগ ও কল্পনায় প্রভাব ফেলেছে কি না? যদি গল্পটা ভালো লাগে তাহলেই আমি চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবি।’

বিশ্লেষক এবং গুণগ্রাহীদের অনেকেই এই চলচ্চিত্র নির্মাতাকে মধ্যপ্রাচ্যের জেমস ক্যামেরুন বলে অভিহিত করেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //