কবিগুরুর ১৬২তম জন্মদিন আজ

আজ পঁচিশে বৈশাখ, বাংলা সাহিত্যের অনন্যপ্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মদিন। আজ থেকে প্রায় ১৬১ বছর আগের ঠিক এই দিনেই (বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ) রবিঠাকুর প্রথম আলোকিত করেন কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। এরপর সেই কিরণ ছড়িয়ে পড়ে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি অধ্যায়ে।

রবীঠাকুরের বাবা মহর্ষি দেবনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর সবাই ছিলেন ভিন্ন এক উচ্চতার মানুষ। 

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্ব দরবারে চিনিয়েছেন বাংলা ভাষাকে। ছিনিয়ে এনেছেন সাহিত্যের নোবেল। বাংলা ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন প্রকাশিত হয়েছে।  

তিনি পৃথিবীর একমাত্র গীতিকবি- যার রচিত ভিন্ন দুটি সংগীত ভিন্ন দুটি দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গীত হয়। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা' বাংলাদেশে, ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।

রবীন্দ্রনাথ বাংলার কবি, বাঙালির কবি। তবে তিনি নিজেকে বিশ্বচরাচরের অংশ হিসেবে বিশ্বাস করতেন। বাঙালির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘তুমি নিছক বাঙ্গালি নও, তুমি বিশ্বচরাচরের অংশ।’ সকলের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রেমের মধ্যে বাঁচতে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে যুক্ত করতে বলেছেন- প্রাণীজগৎ, নিসর্গ, প্রকৃতিকে। শুধু তাই নয়, শিল্পের জগৎ, কল্পনার জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের বিস্তার ঘটাতে বলেছেন। পাশাপাশি কাজ করেছেন কৃষক ও জনমানবের জন্যও।

আবার কখনো তিনি রাজপথে নেমে এসেছেন। করেছেন বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদ। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ছুড়ে ফেলেন ব্রিটিশ সরকারের দেয়া ‘নাইটহুড’ উপাধিও।

বিশ্বকবির ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত স্রষ্টা। চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও রয়েছে তার বিশ্বখ্যাতি।’

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ নোবেলজয়ী এই বাঙালি কবিকে স্মরণ করবে তার অগণিত ভক্ত। শুধু দুই বাংলার বাঙালিই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা ভাষাভাষীরা কবির জন্মবার্ষিকী পালন করবে হৃদয় উৎসারিত আবেগ ও পরম শ্রদ্ধায়। এবার জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘সমাজ সংস্কার ও রবীন্দ্রনাথ।’

রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে।

এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির জন্মদিন পালন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //