পৃথিবীর প্রথম বই গিলগামেশ

ফেসবুকের ও ইন্টারনেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে অবশ্যই। বইয়ের কথা বললে স্বভাবিকভাবেই বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকমের বইয়ের ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পৃথিবীর প্রথম বই কে লিখেছিল, কী সেই বইয়ের নাম প্রশ্ন জাগে মনে। পৃথিবীর প্রথম বই হিসেবে যে নামটি পাওয়া যায় তা হলো  ‘গিলগামেশ’ যা একটি মেসোপটেমীয় মহাকাব্য। 

অবশ্য কারও মতে এটি উপন্যাস, আবার কারও মতে গল্প। গিলগামেশের কাহিনি প্রথম শুরু হয় ৫টি সুমেরীয়  কবিতার মাধ্যমে। গিলগামেশ প্রায় চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক সিরিয়া) লেখা হয়েছিল। লেখকের নাম জানা যায়নি। বইটি ব্রিটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে মাটির ফলকে। এটা লেখা হয়েছিল পৃথিবীর প্রাচীন বর্ণমালা কিউনিফর্মে (কিলকাকার)। তখনকার লিপিকাররা নল খাগড়া দিয়ে কাদা মাটির উপর কীলক খোদাই করে লিখত।

১৮৭০ সালে জর্জ স্মিথ নামে লন্ডনে এক শ্রমজীবী ব্রিটিশ জাদুঘরে এই মাটির ফলক দেখতে গিয়ে পাঠোদ্ধার করেন এবং আমরা গিলগামেশ নামক পৃথিবীর  প্রথম বইটির নাম  জানতে পারি। ২০১১ সালে ইরাকের সুলায়মানিয়া জাদুঘরে  গিলগামেশের দ্বিতীয় একটা কপি উদ্ধার করা হয়েছিল। গিলগামেশ হলো উড়ুক (বর্তমান ইরাক)-এর দক্ষিণে অবস্থিত শহরের রাজা। গিলগামেশ ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা এবং অন্যদিকে নারীলিপ্সু ও অত্যাচারী রাজা। 

তিনি বিয়ের আসর থেকে নারীদেরকে তুলে নিয়ে যেতেন। তখন দেবতারা মিলে এনকিডু নামের এক বন্য মানুষ তৈরি করেন উড়ুকের জনগণকে রাজার অত্যাচার থেকে  রক্ষার জন্য। 

গিলগামেশের মহাকাব্য অনুযায়ী এনকিডুকে প্রেরণ করেন গিলগামেশের সাথে যুদ্ধ করার জন্য; কিন্তু এক পর্যায়ে এনকিডু গিলগামেশের ভালো বন্ধুতে  পরিণত হয়। এনকিডু টারজানের মতো একটা চরিত্র যাকে দেবতা আরুরু আবির্ভাব ঘটান। দেবমাতা নিনসন এনকিডুকে তার দ্বিতীয় পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। দেবমাতা নিনসনের আদেশে গিলগামেশ ও এনকিডু বিভিন্ন অভিযানে যান তার কাহিনি এই উপাখ্যানে বর্ণিত আছে। ঘটনা চক্রে স্বর্গের ষাঁড় হত্যা অপদেবতা হুমাবাবা হত্যার জন্য এনকিডুর শাস্তি হয় মৃত্যুদণ্ড।

এতে গিলগামেশ হতাশায় ভেঙে পড়েন। সে এটা মন থেকে মেনে নিতে পারে না। গিলগামেশ  বন্ধুকে পুনর্জীবিত করার জন্য চেষ্টা চালান। অমরত্বের রহস্য জানার জন্য গিলগামেশ যান উৎনাপিশতিমের কাছে। অনেক চেষ্টা করে গিলগামেশ মৃত্যু সাগরপাড়ে পৌঁছায়; কিন্তু সে সাগর উৎনাপিশতিমের মাঝি  উর্শানারি  ছাড়া কেউ পাড়ি দিতে পারে না। কিন্তু উর্শানারি গিলগামেশকে পার করেনি। 

সে নিজের চেষ্টায় হাজির হয় উৎনাপিশতিমের কাছে। গিলগামেশ  উৎনাপিশতিমের কাছে অমরত্বের সন্ধান চায়। উৎনাপিশতিম গিলগামেশকে অমরত্বের সন্ধান জানা নেই বলে জানিয়ে দেয়। গিলগামেশের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে উৎনাপিশতিমের স্ত্রী তার স্বামীকে অনুরোধ জানান গিলগামেশকে অমরত্বের সন্ধান দেওয়ার জন্য। অবশেষে উৎনাপিশতিম তার স্ত্রীর অনুরোধে গিলগামেশকে অমরত্বের সন্ধান দেন। 

তিনি বলেন মৃত্যু সাগরের তলায় কাঁটাযুক্ত এক ধরনের লতা যার নাম জীয়নলতা। এটা মানুষকে অমরত্ব দিতে পারে। গিলগামেশ জীয়নলতা উদ্ধার করে উড়ুকের উদ্দেশে যাত্রা করে। পথে এক দিঘির ঘাটে জীয়ন লতা রেখে  স্নান করতে নামে। স্নান শেষে এসে দেখে জীয়ন লতা নেই। জীয়ন লতা সাপে খেয়ে ফেলে। সাপের খোলস দেখতে পেয়ে সেটা টের পায় গিলগামেশ।

গিলগামেশ বাঁচাতে পারেনি এনকিডুকে। এরপর গিলগামেশ অনুধাবন করতে পারে যে মৃত্যু সত্য। সবাইকে মরতে হবে একদিন। এভাবেই গিলগামেশের কাহিনি শেষ হয় এক সময়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //