ভার্জিলিও পিনেরার জন্ম ১৯১২ সালের ৪ আগস্ট কিউবার কারডেনাসে। তিনি একাধারে লেখক, নাট্যকার, কবি, ছোট গল্পকার এবং প্রাবন্ধিক ছিলেন; কিন্তু প্রকাশ্যে সমকামিতার জন্য তিনি তার সাহিত্য জীবনে বিখ্যাত তো হতে পারেননি, বরং কুখ্যাত হয়েছেন।
সমকামিতার দায়ে ১৯৬১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, একই কারণে চে গেভারার রোষানলে পড়েন তিনি। কারাগার থেকে ফেরার পর বাকি জীবন লেখালেখি করেই কাটিয়েছেন- কোনো লেখা প্রকাশ হবে না জানা সত্ত্বেও । ১৯৭৯ সালের ১৮ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাভানায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরবর্তীকালে তার লিখে যাওয়া ৪৩টি গল্প নিয়ে ‘কোল্ড টেলস্’ নামক বইটি প্রকাশিত হয়। গল্পটি ভাষান্তর করেছেন: মাইশা তাবাসসুম
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পাখিদের গণ-বলিদান নিয়ে দুটি সম্ভাবনা ধারণা করা হচ্ছে।
প্রথমটি: গণ-আত্মহত্যা; দ্বিতীয়টি: হঠাৎ বায়ুমণ্ডল হালকা হয়ে যাওয়া।
প্রথম সম্ভাবনার বিরোধিতা করার কোনো উপায় নেই। শকুনের মতো পাখি থেকে শুরু করে হামিংবার্ডের মতো পাখিরা, সবাই একই সাথে (বিভিন্ন উচ্চতা থেকে), একই সময়ে (ভরদুপুরে) নিজেদের নিক্ষেপ করতে পারে দুটো উপায়ে। হয়তো তারা সবাই একটি বা একজনের আদেশ মান্য করছিল; কিংবা সবাই মিলে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেকোনো এক উপায়েই কেবল সমস্ত পাখি এক উচ্চতা থেকে একসাথে মাটিতে আছড়ে পড়তে পারে। আমাদের সাধারণ যুক্তি বলে, মানুষ এ ধরনের আদেশ দিতে, কিংবা এমন সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম; কিন্তু পাখির জগৎকে যদি ‘যুক্তি’তে ফেলি, তাহলে বোধ হয় ‘যুক্তি’কেই কটাক্ষ করা হবে।
এদিকে দ্বিতীয় সম্ভাবনা অবশ্যই বাতিল করে দিতে হয়। কেননা বায়ুমণ্ডল যদি হঠাৎ করে হালকা হয়েও যায়, তখন শুধু সেসব পাখিরই মরার কথা যারা সেই মুহূর্তে উড়ন্ত অবস্থায় ছিল।
একটি তৃতীয় সম্ভাবনার কথাও অনেকে ভেবেছে, সেটা মিথ্যা হলেও বিশ্লেষণযোগ্য: একটা মহামারি ভাইরাস, যেটার নাম ঠিকানা অজানা। এই ভাইরাস পাখিদের বাতাসের তুলনায় ভারী করে তুলেছে। এই ব্যাপারটিও সম্পূর্ণ ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারে না।
যেকোনো সম্ভাবনাই ব্যাখ্যাতীত, তবু যেকোনো ঘটনা বাস্তব হতে পারে। এটা সেই সঙ্কটময় সময়, যখন নাস্তিক পণ্ডিতও কোনো ঐশ্বরিক ব্যাখ্যা আশা করে থাকে। পণ্ডিতের গর্ব দ্বিরুক্তির মাধ্যমে শাস্তি পেতে থাকে। পাখিদের এই গণ-আত্মহত্যার মতো অগ্রহণযোগ্য ঘটনাটিকে এড়ানোর একমাত্র উপায় হলো, এই ঘটনাটি আমাদের স্বপ্নে ঘটা; কিন্তু এই ক্ষেত্রে এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দাঁড় করানোও অসম্ভব, অবাস্তব।
সবশেষে যা-ই হোক, পাখিগুলো মাটিতেই পড়ে থাকে, সমস্ত পৃথিবী জুড়ে পড়ে থাকে পাখির স্তর। স্বয়ং ঘটনাটি যতটা না ভয়ঙ্কর, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর হলো এই ঘটনার ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর অসম্ভাবনা। এই অসম্ভাবনার মাঝে আমাদের পায়ে লাখ লাখ পাখির নষ্ট পালকের জট পাকিয়ে যায়।
হঠাৎ কর্কশ আগুনের মতো শব্দ করে সমস্ত পাখি আকাশে উঠে পড়ে। লেখকের হাতে কলমের কাটাকাটিতে তারা আবার প্রাণ ফিরে পায়। এবং একমাত্র সাহিত্যের মৃত্যুর সময়ই আবার এই সব পাখি মাটিতে আছড়ে পড়বে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh