টক-ঝাল-মিষ্টি শিবরাম চক্রবর্তী

রসিকতার মাস্টার শিবরাম। একজন বুদ্ধিমান মানুষ নিজেকে নিয়ে মজা করার সুযোগ অন্যের হাতে তুলে দেবেন? এটা তো হতেই পারে না। অবলীলায় সারা জীবন নিজেকে নিয়ে মজা করেছেন শিবরাম চক্রবর্তী। এ জন্যই তিনি বাংলা সাহিত্যের একদম অন্য রকম একজন স্যাটায়ার লেখক। লেখকের কিছু মজার স্মৃতি নিয়ে লিখছেন- শোয়াইব আহম্মেদ

বুদ্ধিমত্তা আর ভাষাজ্ঞানের জোরে শিবরাম চক্রবর্তীর লেখায় হাস্যরস ফুটে উঠত। আবার হাস্যরসের আড়ালে থাকত সমাজের আসল রূপ, বিপ্লবী চেতনা এবং সাধারণ মানুষদের কথা। সকলের কাছে সমানভাবে সমাদৃত এ লেখকের লেখালেখির শুরু হয়েছিল এক কাবুলিওয়ালার থেকে চড়া সুদে টাকা ধার করে। শর্ত ছিল সময়মতো সুদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে কাবুলিওয়ালা মেসে এসে হামলা করবে।

জাঁদরেল কাবুলিওয়ালার হাত থেকে বাঁচতেই মূলত লেখালেখির শুরু। জীবনের ৬০টি বছর কাটিয়ে দিয়েছিলেন মুক্তারামের মেসে, শুক্তারাম খেয়ে, তক্তারামে শুয়ে। অনেকে বলেন, ১৩৪, মুক্তারাম স্ট্রিটের বাড়িটিতে তিনি নাকি পাহারাদার হিসেবে এসেছিলেন, তারপর আমৃত্যু এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। ঘরে আসবাবপত্রের কোনো বালাই না থাকলেও অভাব ছিল না পুরনো কাগজ, অগোছালো জঞ্জাল আর আজেবাজে জিনিসের। 

ভোজন, নিদ্রা আর সিনেমা- শিবরাম ভালোবাসতেন এ তিনটি জিনিস। পকেটে শেষ টাকাটি থাকা অব্দি নাইট শোতে একটি সিনেমা দেখতেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রর সঙ্গে আচমকাই পরিচয় হলো সিনেমা হলে। পরিচয়ের একটু পরেই দুজনের গল্প এমন তুঙ্গে উঠল যে সিনেমা দেখা মাথায়। শিবরাম তখন ওই সিনেমা হলের সিটে বসেই প্রেমেন্দ্রকে নিয়ে এই দেশ ওই দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কোন কোন দেশ ঘুরতে যাওয়া হবে তার খসড়া রেডি। তখন প্রেমেন্দ্র জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিন্তু এত দেশ যে ঘুরব দুজনে, টাকা কই?’

‘আরে লাখ টাকার মামলা ঠুকেছি ভায়া ওই টাকা হাতে পেলেই বেরিয়ে পড়ব দুই বন্ধুতে।’ 

যার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছেন স্বয়ং তাকেই নিজের পক্ষের সাক্ষী বানিয়েছেন। সত্যি সত্যিই শিবরাম সেবার এক লাখ টাকার মামলা ঠুকেছিল তার পৈতৃক সম্পত্তির দাবিতে। প্রমাণ বলতে শুধু একজন সাক্ষী। এদিকে যা অবশ্যম্ভাবী, তাই-ই ঘটল। আদালতে দাঁড়িয়ে সেই প্রতিপক্ষ তথা সাক্ষী বলল, ‘ধর্মাবতার শিবরামবাবুর এই অভিযোগ সবটাই মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন।’ ব্যস, সাক্ষীর একটি কথাতেই পুরো মামলা ডিসমিস।

মিষ্টি খেতে ভালোবাসতেন, বিশেষ করে রসগোল্লা, রাবড়ি। ‘নকু-মামার মাথায় টাক’ থেকে শুরু করে বহু গল্পে তার উল্লেখ রয়েছে। স্বদেশি আন্দোলনে এক পুলিশের দায়িত্ব পড়েছিল তার উপর নজরদারি করার। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শিবরাম এখান থেকে ওখানে যান, আর হোটেল বা খাবার দোকান দেখলেই থেমে মুখরোচক যা পান খেতে বসে যান। শিবরামকে অনুসরণ করে হোটেলে গিয়ে তো খালি মুখে বসে থাকা যায় না, কিছু না কিছু অর্ডার করতে হয়। এমন করে খেতে খেতে পুলিশ অফিসার গেলেন মুটিয়ে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //